দোল উত্সবকে শান্তিপূর্ণ রাখতে গোটা উত্তরবঙ্গে পুরো মাত্রায় সক্রিয় থাকল পুলিশ। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রাত অবধি উত্তরবঙ্গের সব জেলা মিলিয়ে ৫৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মদ খেয়ে মাতলামি, মদের ঠেক, জুয়ার ঠেক থেকে ছাড়াও বিভিন্ন অসামাজিক কাজের অভিযোগে ধৃতরে পুলিশ ধরেছে।
দুই দিনই শিলিগুড়ি শহরে সাত সকাল থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ কর্মীরা অভিযানে নেমে পড়েন। কাজে লাগানো হয় সিভিক ভলেন্টিয়রদেরও। ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে বাইক এবং গাড়ি চালকদের শ্বাস পরীক্ষাও করা হয়। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ শ্বাস পরীক্ষার নামে অনেককেই হেনস্থা করেছে। প্রথমদিন বিশেষ করে শহরের দার্জিলিং মোড় এলাকায় একাংশ বাইর আরোহীর সঙ্গে পুলিশ কর্মীদের বচসাও হয়। কাগজপত্র পরীক্ষার নামে অনেককেই দীর্ঘদিন দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগও উঠেছে। ১৩৪ জনকে রাত অবধি কমিশনারেট এলাকা থেকে নানা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মা বলেন, ‘‘শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা করনীয় সবই করা হচ্ছে।”
শিলিগুড়ির পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রমপাড়ায় মদ্যপ অবস্থায় দুই ভাইয়ের গোলমালের জেরে একজন অপরজনকে ছুরি বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আহতকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতের নাম মনোজ হেলা। জখমের নাম অর্জুন হেলা। দু’জনেই শিলিগুড়ি পুরসভার সাফাইকর্মী বলে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জানান, মদ্যপ অবস্থায় বিবাদ থেকে ঘটনাটি ঘটেছে।
কোচবিহারে দোলের অভিযানে ১৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে মদ্যপ অবস্থায় এবং জুয়ার আসর থেকে অনেককে ধরা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল এমন কিছু অভিযুক্তকেও ধরা হয়েছে। কোচবিহার পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “দোল উত্সব শান্তিপূর্ণ রাখতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে নামা হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” জলপাইগুড়িতেও বিভিন্ন অভিযোগে ৯৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৮ জনকে।
দোল উপলক্ষে চোলাই ও মদের ঠেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তিন হাজার লিটার মদ বাজেয়াপ্ত-সহ ২৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মালদহের চাঁচল মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই মদ বাজেয়াপ্ত সহ ঠেক মালিকদের ধরা হয়। ধৃতদের মধ্যে দুই মহিলাও রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য্য বলেন, “আগামী কয়েকদিন ধরেই লাগাতার অভিযান চলবে।”
চাঁচল থেকে ১৩৭৯ লিটার ও পুকুরিয়া থেকে ৭৮২ লিটার মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। চাঁচল থেকে দুই মহিলা সহ আট জন ও পুকুরিয়া থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে ৬০০ লিটার মদ বাজেয়াপ্ত সহ ৫ জনকে ও রতুয়া থেকে ১০ জনকে ধরা হয়। উদ্ধার হয়েছে ১০০ লিটার মদ।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উত্তর দিনাজপুর পুলিশের তরফে অভিয়ান চালানো হয়। হোলিতে মেতে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়াভাবে ও নথি ছাড়া বাইক চালানোর অভিযোগে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ জন যুবকককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০টি বাইক আটক করা হয়েছে। এর আগে বুধবার রাতে রায়গঞ্জের মোহনবাটি, সুভাষগঞ্জ, চাপদুয়ার, সুভাষগঞ্জ-সহ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার হোটেল ও রেঁস্তোরায় অভিযান চালিয়ে ৪০ হাজার টাকার দেশি ও বিলেতি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেআইনি মদের কারবারের অভিযোগে ১১ জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে, চাকুলিয়া থানা এলাকা থেকে সাত জন মদ্যপ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, হোলিকে কেন্দ্র করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হোলির দুই দিন জেলা জুড়ে পুলিশের অভিযান জারি ছিল।
মালদহ শহরেও দোল উত্সব হয়েছে শুক্রবার। জেলার বিভিন্ন বেআইনি মদের ঠেকে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে ইংরেজাবাজার, কালিয়াচক, মোথাবাড়ি এলাকায় হানা দিয়ে প্রায় চারশো বোতল দেশি, বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দোল উপলক্ষ্যে রাস্তায় বাড়তি টহলদারি চলবে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার মঙ্গলপুর থেকে চারজনকে ৩৫ বোতল মদ-সহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, হিলি মোড়ে নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ-সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একাধিক পুরানো অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার ধরা হয়েছে আরও ২৬ জনকে।
দোলের প্রথমদিন দিন বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে দুই জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসলামপুর থানার দুর্গানগর এলাকাতে ঘটনাটি ঘটেছে। এদিন দুইটি যুবক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক নিয়ে একটি দেওয়ালে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ইসলামপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।