প্রদেশ যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি, জেলার পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তীকে ঘিরে বিক্ষোভ দলেই। জলপাইগুড়িতে রবিবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।
লোকসভায় প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম দলীয় বৈঠকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা গেল। আধঘণ্টা ধরে দুই গোষ্ঠীতে হাতাহাতিও হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে এই ঘটনার পরে দলের দুই গোষ্ঠীর তরফে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে দলের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে অভিযোগগুলি প্রত্যাহার করা হয়। তবে এই ঘটনায় সারা শহর জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। জেলা তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয় উত্তেজনা। যদিও হাতাহাতি-মারধরের কথা দুই গোষ্ঠীর নেতারাই অস্বীকার করেছেন।
রবিবার ঘটনায় লোকসভা নির্বাচনের আগে জলপাইগুড়িতে তৃণমূল যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে বলে দলের নেতারা মনে করছেন। দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা উপ নির্বাচনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এ দিন কর্মিসভা ডাকা হয়েছিল জেলা কার্যালয়ে। জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে দলের প্রার্থী বিজয়কৃষ্ণ বর্মন, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী দশরথ তিরকে এবং ময়নাগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। কর্মিসভার আগে সাংবাদিক বৈঠকও হয়। কর্মিসভা শুরুর আগে কার্যালয়ে এসে পৌঁছন প্রদেশ যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জলপাইগুড়ি জেলার পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী। তাকে ঘিরে হঠাৎই বিক্ষোভ শুরু করেন দলের কিছু কর্মী।
সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূলের সংগঠনের কিছু রদবদল হয়েছে। দলের সদর ব্লকের সভাপতি হারাধন সরকারকে সরিয়ে নিতাই করকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত নিতাইবাবু মাস খানেক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। নিতাইবাবুর সঙ্গেই সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বারোপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণ দাস। কৃষ্ণবাবুকেও দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর পর থেকেই দলের বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ শুরু হয়। পুরোনো নেতা কর্মীদের সরিয়ে মাত্র মাসখানেক আগে দলে আসা নেতা ও কর্মীদের বিভিন্ন পদে কেন বসানো হচ্ছে, ওই প্রশ্ন তুলে জবাবদিহি চাওয়া হয় সৌরভবাবুর কাছে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। সৌরভ বাবুকে বাঁচাতে এগিয়ে যান কৃষ্ণবাবু। তিনি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। এরপরে কৃষ্ণবাবু সহ সৌরভবাবুর অন্য অনুগামীদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সৌরভবাবু দ্রুত দলের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ধূপগুড়িতে দলের সভায় চলে যান। ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষই দলের রাজ্য কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “গণতান্ত্রিক দলে কোনও বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মত হতেই পারে। দলে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলে সেটা আলোচনা করেই মেটানো হবে।”
এ দিনের ঘটনা সৌরভবাবুর দাবি, “আমার সঙ্গে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কৃষ্ণবাবুকে দলেরই কিছু কর্মী এই দিন মারধর করেছেন। তবে এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দলের অন্দরে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।” তবে কৃষ্ণবাবু বলেছেন, “তর্কবির্তক চলেছে। হেনস্থা হয়েছে। যা ঘটেছে দলের নেতাদের সামনেই ঘটেছে। তাঁরাই এই ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।”
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের সভাপতি ছিলেন হারাধন সরকার। তিনি জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। হারাধনবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সৌরভবাবুর নির্দেশে সংগঠনে রদবদল হয়েছে। এ দিন ঘটনার সময় দলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক দলীয় দফতরে ছিলেন না। চন্দনবাবু বলেন, “অতি উৎসাহে কেউ গোলমাল করেছে শুনেছি। এটা এমন কোনও বিষয় নয়। জলপাইগুড়িতে ফিরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে কেন এমনটা হল জানতে চাইব।”
হারাধনবাবু এই দিন বলেছেন, “১৯৯৮ সাল থেকে তিলতিল করে দল গড়ে তুলেছি। কোনও আলোচনা ছাড়া হঠাৎ আমাকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় দলের সাধারণ কর্মীরা তা মেনে নিতে পারেননি। সৌরভবাবুর কাছে এটাই জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি শুনতে চাননি।” সদ্য ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া নিতাইবাবু অবশ্য বলেন, “ব্লকের সংগঠন দূর্বল হয়ে যাচ্ছিল। দল যোগ্য মনে করেছে বলে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা দলে যোগ দেওয়ার পরে সংগঠনও বেড়েছে।”