রাস্তা নেই। আলো পৌঁছয়নি। পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাও হয়নি। এমনই এক এলাকা রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা সদরের একেবারে গা ঘেঁষেই। নাম তার দেবনগর। জলপাইগুড়ি শহর থেকে দেবনগরের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। কদমতলা থেকে রিকশা ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। সদরের এত কাছে হয়েও আজও কেন উন্নয়ন অধরা তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
দেবনগর খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছে। প্রথমে দেখে নেওয়া যাক রাস্তাঘাটের হালটা কেমন? প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টি রাস্তা রয়েছে। ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত সবই কাঁচা ছিল। এর পরে সব কটি রাস্তা পাকা হয়েছে। কিন্তু, নিয়মিত সংস্কার হয়নি। ফলে, পিচ-পাথর উঠে অনেক জায়গাতেই রাস্তার হাল আবার যেন অতীতের মতোই হয়ে গিয়েছে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা স্বদেশ মিত্র বলেন, “দুঃখের কথা আর কী বলব! পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদে আমরা বহু আবেদন, দাবি জানিয়েছি। আশ্বাস দেন সকলেই। কাজ হয় কোথায়? ১৯৯০ সালে দেবনগরের রাস্তা পাকা হওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। পরে আর সংস্কারই হল না। এখন তো ভোগান্তি আগের চেয়ে বেশি।” তাই আগামী বর্ষায় রাস্তায় চলাফেরা করা সম্ভব হবে কী ভাবে সেটাই ভেবেই উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা।
পথবাতির বিবরণ আরও করুণ। পথের ধারে অনেক জায়গায় বাতিস্তম্ভ আছে। বাতি নেই। এলাকাবাসীরা জানান, বহু বছর আগে কয়েকটা বাতি লাগানো হয়েছিল। তা টিমটিম করে জ্বলত। কিন্তু, বাতিগুলি অকেজো হওয়ার পরে (কোথাও চুরি হয়েছে) আর লাগানো হয়নি। সন্ধ্যার পরে এলাকার রাস্তা সত্যি সত্যিই তিমিরে।
পানীয় জলের কষ্ট সারা বছরই। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা সে কথা বলছে। রাস্তার ধারে জলের কল রয়েছে। জল পড়ে না। বাসিন্দারা জানান, একটা সময়ে জল পড়ত ঠিকই, কিন্তু পাইপ খারাপ হওয়ায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে নতুন করে পাইপ লাগানো হয়নি বলে জল সরবরা চালু হয়নি। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাছে বহুবার অনুরোধ করে হাল ফেরাতে পারেননি এলাকার পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। প্রলব দাবদাহে নলকূপই ভরসা। অথচ বহু এলাকায় নলকূপ বিকল।
একজনদরে দেখে নেওয়া যাক দেবনগরের ভূগোল কেমন?
১৪৬, ১৪৭ এবং ১৪৮ নম্বর--তিনটি সংসদ নিয়ে গঠিত দেবনগর এলাকা কদমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা ৭৩ মোড় হয়ে চাউলহাটি, পাঙ্গা বরাবর চলে যাওয়া রাজ্য সড়কের ধারে অবস্থিত। দেবনগর এলাকা ১৪৬ এবং ১৪৭ নম্বর বুথ এলাকার অধীন। দেবনগরের বৃহত্তর অংশের সবগুলি রাস্তাই ১৯৯০ সালে তৈরির পর আজও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। প্রবীণ জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার প্রায় ২০-২২ বছর ধরে দেবনগরের ১৪৭ নম্বর সংসদ এলাকায় প্রথম ৫ বছর কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। তৃণমূল সদস্য জ্ঞানেন্দ্রবাবু বলেন, “আমার অংশের অন্তত ৭টি বেহাল রাস্তা মেরামতির জন্য বহু দরবার করা হয়েছে। জলের জন্য প্রস্তাব হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদে সিপিএম ক্ষমতায় থাকায় আমাদের প্রস্তাব কেটে দিয়েছে বলে প্রাক্তন সদস্যের অভিযোগ।”
গত পঞ্চায়েত ভোটে দেবনগর ১৪৭ নম্বর সংসদ থেকে জয়ী হয়েছেন সিপিএমের কাজল দত্ত। তাঁর কথায়, “আগে কি হয়েছে জানি না। আমরা এলাকার রাস্তা, জল ও পথবাতির ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছি। আশা করছি, এ বারে কাজগুলি হবেই।” ১৪৬ নম্বর সংসদ থেকে পর পর দু’টার্মের বিজয়ী বর্তমান তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বীণা চন্দ অভিযোগ করেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা বিরোধী বলে এলাকা উন্নয়নে দরবার করা হলেও কোনও কাজ করতে চায়নি সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত ও জেলাপরিদ। অথচ ১৪৮ নম্বর সংসদে সিপিএম ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ওই অংশে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। সমস্ত নথি রয়েছে। নাগরিক পরিষেবা উন্নতির দাবিতে আন্দোলন চলবে।” সংশ্লিষ্ট খড়িয়া পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান অজয় সেন অবশ্য বিরোধী তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কাজ করতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দেবনগরের রাস্তা, পানীয় জল ও পথবাতির ব্যবস্থা করতে আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। জেলাপরিষদের বাজেটে প্রকল্প ধরা হয়েছে টাকার সমস্যা মিটলে কাজ শুরু হবে।”
এলাকার বাসিন্দা মনা দাস, মায়া পাল, সুলেখা পালেদের মতো কেউ শিলিগুড়ি, কারও হলদিবাড়ি এবং বালুরঘাটে বিয়ে হয়ে চলে গিয়েছেন। আজ তাঁরা ছেলেমেয়ে, নাতিপুতিদের নিয়ে ওই বেহাল রাস্তা দিয়ে বাপের বাড়ি দেবনগরে এলে দুর্ভোগে পড়ার পাশাপাশি অবাক হয়ে যান। তাঁরা আক্ষেপ করেন, “চার দিকে কত পরিবর্তন। করলা নদী দিয়ে কত জল বয়ে গেল, অথচ দেবনগরের কোনও পরিবর্তন হল না।”
মাদকে লুঠ। বৃদ্ধ দম্পতিকে মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে দামি জিনিস নিয়ে পরিচারিকা পালিয়ে গিয়েছে। উঠেছে। রবিবার রাতে দিনহাটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক্সচেঞ্জ মোড় লাগোয়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার সকালে মেঝেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা দম্পতিকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে দুই জনের জ্ঞান ফিরলেও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারছেন না। ওই দম্পতির নাম সুবোধ ও আরতি চক্রবর্তী। কয়েক বছর আগে সুবোধবাবু সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। তাঁদের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কর্মসূত্রে ছেলে শিলিগুড়িতে থাকেন। দিনহাটার বাড়িতে তাঁরা ছাড়াও তাঁদের দেখাশোনায় পরিচারিকা থাকতেন।