খুলে নেওয়া হয়েছে যাত্রার প্যান্ডেল। —নিজস্ব চিত্র।
চাষের জমিতে জুয়ার আসর বসানোর প্রতিবাদ করায় এক দিনমজুরকে মারধর করার অভিযোগ উঠল। রবিবার গভীর ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ময়নাতলি গ্রামের ঘটনা।
দোল উৎসব উপলক্ষে যাত্রা অনুষ্ঠানের পাশে ওই জুয়ার আসর বসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। সোমবার দুপুরে আক্রান্ত দিনমজুর ধনঞ্জয় রায় স্থানীয় তিন যুবকের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে জানান, হামলার ঘটনায় আরও কয়েকজন ছিল। অন্ধকারে তিনি তাঁদের চিনতে পারেননি। এ দিকে বাড়িতে ফিরে যেতে দিনমজুরের বিরুদ্ধে উৎসব কমিটির তরফে গণসাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি সহ মদ্যপ অবস্থায় যাত্রা অনুষ্ঠানে গোলমাল পাকানোর পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়। ধূপগুড়ি থানার আইসি যুগলচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।”
ধনঞ্জয়বাবু জানান, প্রতি বছর বাড়ির পাশে দোল উৎসব উপলক্ষে যাত্রা অনুষ্ঠান হয়। রবিবার রাতে ধূপগুড়ি থেকে ফিরে যাত্রা অনুষ্ঠানে না গিয়ে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েন। রাত ১টা নাগাদ হইচই শুনে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন বাঁশ বাগানের পাশে তাঁর চাষের জমিতে কিছু লোক কুপি জ্বেলে হল্লা করছে। তাঁর অভিযোগ, “কাছে গিয়ে বুঝতে পারি সেখানে জুয়ার আসর বসেছে। নিজের জমিতে জুয়ার আসর বসানো চলবে না বলতে কয়মন রায়, কমল রায়, অলোক রায় সহ কয়েকজন তেড়ে এসে গলা চেপে ধরে কিল চড় মারতে শুরু কে। আমার চিৎকার শুনে স্ত্রী মিনতিদেবী দৌড়ে না গেলে মরে যেতাম।” তাঁর অভিযোগ, হামলাকারীরা প্রত্যেকে তৃণমূলের লোক। অভিযুক্ত কয়মন রায় এবং কমল রায় কথা বলতে চাননি।
তবে এলাকার সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য তথা মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কৃষ্ণকান্ত সরকার ধনঞ্জয়বাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেন। অভিযুক্ত তিন যুবক কোনও দলের সক্রিয় সমর্থক নয় বলেও জানান কৃষ্ণকান্তবাবু। তিনি বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এখানে রাজনীতির কিছু নেই।” একই বক্তব্য স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফারুক হোসেনেরও। উৎসব কমিটির সম্পাদক প্রবীণ রায় বলেন, “হামলা হয়ে থাকলে কেন উৎসব কমিটিকে জানালেন না ধনঞ্জয়বাবু? আমরা তো সবাই অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশে ছিলাম।”
এদিন দুপুরে পুলিশ ঘটনার তদন্তে এলাকায় গেলে বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য ধনঞ্জয়বাবুর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ জানান। তাঁদের অভিযোগ, “ওই পরিবারটি পাঁচশো টাকার বিনিময়ে নিজেদের জমিতে জুয়ার আসর বসতে দেন। সন্ধ্যায় ওই টাকা নেওয়ার পরে রাত ১টা নাগাদ মদ্যপ অবস্থায় ধনঞ্জয়বাবু আরও পাঁচশো টাকা দাবি করলে কয়েকজনের সঙ্গে বচসা হয়।” যদিও ‘আক্রান্ত’ দিনমজুর এবং তাঁর স্ত্রী বাসিন্দাদের সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তাঁদের দাবি, “হামলার পরে ঘটনার কথা উৎসব কমিটিকে জানিয়ে লাভ হবে না বুঝে তাঁদের কাছে যাইনি।”