বিকোচ্ছে প্লাস্টিকের গোলাপ। —নিজস্ব চিত্র।
চড়া দাম আসল ফুলের। তাই নকল প্লাস্টিকের গোলাপের কদর তুঙ্গে কোচবিহারে। অন্তত, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর প্রাক্কালে ফুল ব্যবসায়ীরা তেমনই মনে করছেন। ফুলের চাহিদায় সমান তালে পাল্লা দিল আসল-নকল।
‘আসল’ হাল্কা হলুদ, গাঢ় গোলাপি ডাচ, টকটকে লাল মিনি কুইনের টানেও অবশ্য মজেছেন অনেকে। রঙবাহারি প্লাস্টিকের নকল গোলাপের সঙ্গে যাদের লড়াই। আসল গোলাপ কেনার পক্ষে যেমন যুক্তি দিচ্ছেন ওই ক্রেতারা। পাল্টা যুক্তিতে সওয়াল উঠছে। ফুলবাজারে দাঁড়িয়ে এক কলেজ ছাত্রী বলেন,“দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। তবে আসল গোলাপের বিকল্প নেই।” পাশে দাঁড়ান যুবকের পাল্টা, “দিনকয়েকের মধ্যেই আসল ফুল শুকিয়ে যায়। সেই তুলনায় নকল গোলাপ অনেক বেশি টেকসই। বহুদিন হবহু রঙ থাকবে প্রিয়জনের ঘরে কম খরচে উপহার বেশি দিন চকচকে থাকলে ক্ষতি কী! ”
ফুল ব্যবসায়ীরাও ওই লড়াইয়ের কথা মানছেন। কোচবিহার জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা নীরেন দেব বলেন , ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র বাজারে বেঙ্গালুরুর ডাচ গোলাপের চাহিদা বরাবর বেশি। এ বার চাহিদার তুলনায় যোগান কম। তার উপরে পরিবহণ খরচ। ফলে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সব মিলিয়েই প্লাস্টিকের ফুল কেনার দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। প্লাস্টিক ফুল ব্যবসায়ীদের একজন ভাস্কর পালের দাবি, রঙের বৈচিত্র্য এক্ষেত্রে অনেক বেশি। ইচ্ছেমত তোড়া তৈরিতেও খরচ সেই তুলনায় কম। তাছাড়া ঘরে অনেক বেশিদিন প্লাস্টিকের ফুল নতুনের মত থাকবে। “ধুয়ে নিলেই হল”, ক্রেতারাই কেনার ফাঁকে বলছিলেন।
আসল ও নকল গোলাপের লড়াইয়ের এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? বছরখানেক আগেও যেখানে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র বাজারে ছিল বেঙ্গালুরুর ডাচ আর মেদিনীপুরের মিনিকুইন। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ফলে বাইরের বাজারে উপরে কোচবিহারের ফুল বাজারে দাম ওঠানামা নির্ভর করছে। বিশেষ দিনে চাহিদা অনুযায়ী ফুল মেলেনা, অথচ কোচবিহারে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষের এলাকা সেভাবে বাড়েনি। জেলায় পর্যাপ্ত ফুল উৎপাদন হলে গতবারের ডাচ একলাফে ২০ টাকা প্রতি পিস থেকে এ বার ৪০-৫০ টাকা দরে পৌঁছচ্ছে না। প্লাস্টিকের নকল গোলাপ যেখানে ন্যূনতম ১০ টাকায় মিলছে।
কোচবিহার জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক খুরশিদ আলম অবশ্য বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে জেলার কয়েকজন চাষি গোলাপ ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন। অসমে ফুলও পাঠাচ্ছেন তারা। ওই চাষিদের সাফল্য তুলে ধরে জেলায় গোলাপের এলাকা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছি।” উদ্যানপালন দফতর সূত্রেই অবশ্য জানা গিয়েছে, জেলায় গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা, গোলাপ সহ বিভিন্ন ফুল মিলিয়ে সাকুল্যে ১৫০ হেক্টর এলাকায় ফুল চাষ হয়। তার মধ্যে বিঘা দশের কম এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ হচ্ছে। চাহিদা থাকলেও এলাকা বাড়াতে এমন ঘোষণা হলেও আগেও সেভাবে কিছু করা যায়নি।