বাসে আলাপ করে প্রথমে বিস্কুট-চকোলেট খাওয়ার জন্য জোড়াজু়ড়ি। অবশেষে ঘুমের ওষুধ মেশানো চা খাইয়ে অচৈতন্য করে ছিনতাই হল যুবকের সোনার আংটি, সোনার চেন, এটিএম কার্ড-সহ মানিব্যাগ।
প্রতারণার এমনই অভিযোগ উঠল বালুরঘাটের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ বাসস্ট্যান্ডে। বুধবার দুপুরের ঘটনা। এর পর বিকেল নাগাদ অচৈতন্য অবস্থায় শহরের প্রাচ্যভারতী এলাকার বাসিন্দা অভিষেক দেব সিংহকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে জ্ঞান ফিরলে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামে পরিচয় দেওয়া ওই অচেনা যুবকের বিরুদ্ধে অভিষেক বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনার পর ট্রেনের পাশাপাশি বালুরঘাটের সরকারি বাসেও যাত্রী নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বাসের কন্ডাক্টরের ভূমিকা নিয়েও।
ঘটনার কথা শুনে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বোর্ড ডিরেক্টরের সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খাঁ বলেন, ‘‘যাত্রীদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে বৃহস্পতিবার বোর্ডের সভা হয়। তাতে এই ধরনের ঘটনা নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাসের কন্ডাক্টর ও কর্মীদের সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মহকুমাশাসক এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বাসস্ট্যান্ড এবং প্রতি স্টপেজে নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।’’ বাসস্ট্যান্ডে সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব আগামী বোর্ড মিটিঙে রাখা হবে বলে বিপ্লববাবু জানিয়েছেন।
এ দিন বাড়িতে শুয়ে অভিষেক জানান, বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকেই লম্বা ছিপছিপে চেহারার ওই যুবক আলাপ জমায়। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বাসে তাঁর পাশের আসনেই সে বসে। ব্যাঙ্কেরই কাজে বুনিয়াদপুরে যাবে বলে অভিষেকের টিকিট কাটা ছিল। পাশে বসা ওই যুবকের গন্তব্য ছিল রায়গঞ্জ। এর পর বাসের মধ্যে বিস্কুট খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে ওই যুবক। প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে চকোলেটের প্যাকেট ছিঁড়ে এক টুকরো খাওয়ার জন্য জোড় করতে থাকে। বাধ্য হয়ে অল্প ভেঙে মুখে দিতেই সে জলের বোতল এগিয়ে দেয়। এক ঢোক জল খাওয়ার পরেই ঝিমুনি আসায় ঘুমিয়ে পড়েন অভিষেক।
অভিষেক বলেন, ‘‘ঘুম ভেঙে দেখি বুনিয়াদপুর ও কুশমন্ডি পার হয়ে চলে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে গন্তব্য পিছনে ছেড়ে আসার বিষয়টি কন্ডাক্টরকে জানালে অভিষেককে ফতেপুর স্টপেজে নামিয়ে দেওয়া হয়।’’ অভিষেক জানান, সে সময় হাতের দু’টি আঙটি, গলার চেন, মানিব্যাগ সবই তাঁর ছিল। তাঁর সঙ্গেই ফতেপুরে ওই যুবক নেমে যায় এবং বলে অফিসের নির্দেশে সেও বুনিয়াদপুরে কাজ সারতে যাবে। এর পর চা খাওয়ার প্রস্তাব দিলে মাথা ধরে থাকার কারণে রাজী হন অভিষেক। ফিরতি বাসের অপেক্ষায় তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা নিয়ে ফিরে আসে সে। তিনি বলেন, ‘‘চা খাওয়ার পরই মাঝেমধ্যে হুঁশ হারাচ্ছিলাম। কোনও মতে বাস ধরে বালুরঘাটে নেমে রিকশা করে বাড়ি ফেরার পরে আর জ্ঞান ছিল না।’’
অভিষেকের বাড়ির লোকের প্রশ্ন, ‘‘বুনিয়াদপুরে টিকিট কাটা সত্ত্বেও কুশমন্ডি পার হয়ে যাওয়ার পরেও অভিষেক নামেননি। এটা কন্ডাক্টরের কেন খেয়াল হল না?’’ আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে।’’