জখম: হাসপাতালে ওই মহিলা শ্রমিক। শুক্রবার।
কাঁধের নীচে হাতটা কামড়ে ধরে এক মহিলাকে ঝোপে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে একটি চিতাবাঘ। চিৎকার করতে করতে অন্য হাত দিয়ে বারবার চিতাবাঘটির মাথায় আঘাত করছেন মহিলা। দূর থেকে এই লড়াই দেখতে পেয়ে ততক্ষণে লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করেছেন আশপাশের লোকজন। অবস্থা বেগতিক দেখে মহিলাকে ছেড়ে পালিয়ে যায় চিতাবাঘটি।
শুক্রবার চিতাবাঘের সঙ্গে চা বাগানের এক মহিলা শ্রমিকের এমনই এক লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল কালচিনির রাজাভাত চা বাগান। চিতাবাঘটি শেষপর্যন্ত হার মানলেও জখম হন ওই মহিলা শ্রমিক। দ্রুত তাঁকে প্রথমে বাগানের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তারপর সেখান থেকে তাঁকে উত্তর লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, মহিলার চিকিৎসার খরচ বন দফতর নেবে।
সুখা মরসুম হওয়ায় এই মুহূর্তে চা বাগানগুলিতে পরিচর্যার কিছু কাজ চলছে। এ দিন সাতসকালে সেই কাজে যোগ দেন রাজাভাত চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক বছরের চল্লিশের অনিতা নাগাসিয়া। বাগানের ১০ নম্বর সেকশনে একটি নালার ধারে কাজ করছিলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আচমকাই একটি চিতাবাঘ অনিতার উপর আক্রমণ করে। তাঁর ডান হাত কামড়ে ধরে চিতাবাঘটি। বাগানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী শিবদয়াল মাহালি বলেন, ‘‘প্রাণে বাঁচতে পাল্টা চিতাবাঘকে আক্রমণ করেন ওই মহিলা শ্রমিক।’’ সূত্রের খবর, কয়েক মুহূর্তের জন্য চিতাবাঘের সঙ্গে ওই মহিলার ধস্তাধস্তি বেধে যায়। চিতাবাঘটি অনিতার এক হাত কামড়ে তাঁকে ঝোপে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন অন্য হাত দিয়ে চিতাবাঘটির মাথায় ক্রমাগত মারতে থাকেন তিনি। এর মধ্যেই অবশ্য হাতে ও কোমরে কামড়ায় চিতাবাঘটি।
শিবদয়াল জানান, মহিলাকে চিতাবাঘ আক্রমণ করছে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে কাজ করতে থাকা অন্য শ্রমিকরাও লাঠিসোটা নিয়ে তাকে বাঁচাতে ছুটে যান। ভয়ে চিতাবাঘটি ওই মহিলা শ্রমিককে ছেড়ে পাশের ঝোপে ঢুকে পড়ে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা কল্যাণ রাই বলেন, ‘‘চিতাবাঘের আক্রমণে ওই মহিলা সামান্য জখম হয়েছেন। তাঁকে উত্তর লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’ নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করবে বলে বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।
চা বলয়ে চিতাবাঘের হানায় মানুষের মৃত্যু বা জখম হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। গতবার মাদারিহাট-বীরপাড়ার চা বলয়ে চিতাবাঘের আক্রমণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। কিছুদিন আগেও চিতাবাঘে আক্রমণে মাদারিহাটের গ্যারগেন্দা চা বাগানের বাসিন্দা এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। তার ঠিক পরে কালচিনির বিচ চা বাগানে চিতাবাঘ এক শিশুকে জখম করে। এরপর এ দিনের ঘটনায় চা বলয়ে চিতাবাঘ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলছে।
বন দফতরের এক কর্তা বলেন, আক্রমণকারী ওই চিতাবাঘটি ধরতে খাঁচা পাতা হবে। তবে চা বাগানের ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করলে এমন ঘটনা ঠেকানো কঠিন। যে কাজ করার দায়িত্ব বাগান কর্তৃপক্ষেরই। নিজস্ব চিত্র