দলবদলের পর। মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য দ্বিজেন মণ্ডল (বাঁ দিক থেকে), সরলা মুর্মু এবং খুশি বিশ্বাস। তৃণমূল ভবনে। — নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন ধরেই মালদহ জেলা পরিষদ হাত বদলের জল্পনা চলছিল। সোমবার শাসকদল তৃণমূল কার্যত মালদহ দেলা পরিষদের দখল নিল। এদিকে বোর্ড নিয়ে কয়েকদিন ধরে ডামাডোল চলায় জেলা পরিষদের কাজকর্ম কার্যত লাটে উঠেছে। সভাধিপতি সরলা মুর্মু শেষ বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদে এসেছিলেন। তারপর থেকে তিনি আর আসছেন না। মাঝে অবশ্য শনি ও রবিবার পড়েছিল, কিন্তু শুক্র ও সোমবার তিনি না আসায় অনেক কাজ জমে গিয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষরাও বেপাত্তা। শুক্রবার কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ এসেছিলেন, কিন্তু সোমবার কেউই আসেননি। জানা গিয়েছে, বোর্ডের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা গোপন ডেরায় এদিন শলাপরামর্শেই ব্যস্ত ছিলেন। ফলে কর্মাধ্যক্ষদের চেম্বারগুলি এদিন খাঁ খাঁ করেছে। তবে কর্মাধ্যক্ষরা না থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজে এসে ঘুরে গিয়েছেন অনেক মানুষ। ভালুকা হাসপাতালের কিছু সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মাঞ্জারুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ভালুকার ইসমাইল শেখ। তিনি বলেন, ‘‘গাঁটের কড়ি খরচ করে স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষকে ভালুকা হাসপাতালের সমস্যা জানাতে এলাম। কিন্তু তাকে এদিন পেলাম না।’’ মাঞ্জারুলের ফোন সুইচড অফ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি। অনেকে বলছেন, বছর বছর দলবদলের নাটক চলবে আর মানুষকে ভুগতে হবে, এটা মানা যায় না। জেলা পরিষদ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, সভাধিপতি বা কর্মাধ্যক্ষরা না থাকায় প্রশাসনিক কাজকর্মে কোনও ব্যাঘাত হয়নি।
এ দিন মালদহ জেলা কংগ্রেস ও সিপিএমের পার্টি অফিসও ছিল সুনসান। বেলা দেড়টা নাগাদ জেলা কংগ্রেসের সদর পার্টি অফিস হায়াত ভবনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কয়েকজন ছাত্র পরিষদের কর্মী বসে রয়েছেন। তাঁদের চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। তাঁরাও ফোন করে জেলা পরিষদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। সিপিএমির জেলা পার্টি অফিস মিহির দাস ভবনে অবশ্য বসেছিলেন দলের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র, জেলা নেতা কৌশিক মিশ্র সহ আরও কয়েকজন জেলা নেতা। তাঁদেরও চোখ টেলিভিশনে চলা দলবদলের দিকে। অনাস্থা আনা যায় কি না, তা নিয়েও অলোচনা করছেন তাঁরা।
জেলা পরিষদ যে হাতবদল হবে, তা কয়েক দিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। তবে শুক্রবার রাতে তৃণমূলের জেলা পরিষদের দলনেতা উজ্জ্বল চৌধুরী খোদ সভাধিপতি সরলা মুর্মু সহ কংগ্রেসের ৪ ও বামেদের ৭ জনকে নিয়ে চারটে গাড়িতে করে যখন কলকাতায় রওনা হন, সে দিনই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। জানা গিয়েছে, পরে কলকাতায় তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসের একজন সদস্য দুর্গেশ সরকার ও সমাজবাদী দলের দুই সদস্য মিলন দাস এবং কাঞ্চন সিংহ মণ্ডলও যোগ দেন। ফলে জেলা পরিষদ যে পুরোপুরি শাসকদল দখল করছে, তা শনিবারের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায়।
যদিও কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব শেষপর্যন্ত দাবি করে গিয়েছিল যে, বোর্ড তাদের দখলেই থাকছে। ১৯ জন সদস্য তাঁদের সঙ্গে গোপন ডেরায় আছে। এদিকে সোমবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে কংগ্রেস ও বাম মিলিয়ে ১৩ জন দলে যোগ দেন. মিলনবাবু ও কাঞ্চনদেবী অবশ্য দলে যোগ না দিয়ে তৃণমূলকে বাইরে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এদিন দলবদলের সময় তাঁরা দুজন সেখানে হাজিরও ছিলেন। তৃণমূলের ৬ জন সদস্য আগে থেকেই ছিলেন। জেলা পরিষদের ৩৭ জন সদস্যদের মধ্যে শাসকদলের দিকে ২১ জন হয়ে যাওয়ায় বোর্ড হাত বদল আর সময়ের অপেক্ষা।