প্রতীকী ছবি।
রাজ্য বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল করতে না পারার পিছনে কি বাঙালিয়ানা রপ্ত করতে না পারা? নাকি প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলচুক? সূত্রের খবর, সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরে ভোট-পরবর্তী আলোচনা ও মূল্যায়নে এমনই সব বিষয় সামনে এসেছে।
সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। প্রায় সব রিপোর্টেই প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের কথা সামনের সারিতে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটে হারের জন্য যে ‘বৃহত্তর অরাজনৈতিক’ কারণ নিয়ে সঙ্ঘের অন্দরে তুমুল চর্চা চলছে, সেটি হল— বাঙালি হয়ে উঠতে না পারা। হিন্দি বলয়ে যে কাঠামোয় দল পরিচালিত হয়, এ রাজ্যেও বিজেপি সেই পথেই চলেছে। আর তাতেই কাল হয়েছে বলে মনে করছে সঙ্ঘ। এমনকি, তৃণমূলের বাঙালিয়ানায় অনেক ‘মিথ্যাচারের’ অভিযোগ করলেও সঙ্ঘের মাথারা মনে নিচ্ছেন, জনগণের বড় অংশটি তৃণমূলকেই বিশ্বাস করেছে বাঙালি দল হিসেবে। সঙ্ঘের এক স্বয়ংসেবকের কথায়, “কার্যকর্তা, প্রভারী, মণ্ডল, বিস্তারক— এই জাতীয় আধা হিন্দি শব্দ নিয়ে বিজেপি সংগঠন গোছাতে শুরু করেছিল। আম-বাঙালি তাই বিজেপিকে নিজেদের দল না ভেবে হিন্দি বলয়েরই দল ভেবেছে।”
একই সঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সঙ্ঘ। সূত্রের দাবি, এখন বঙ্গে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্ঘের যে সব স্বয়ংসেবক বা কার্যকর্তা বিজেপির সঙ্গে এত দিন যোগাযোগ রাখতেন বা বিজেপির দৈনন্দিন সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে অংশ নিতেন, তাঁদের বার্তা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হয় তাঁদের পুরোদস্তর বিজেপিতে গিয়ে রাজনীতি করতে হবে, নয়তো বিজেপির সঙ্গ পুরোপুরি ছেড়ে সঙ্ঘের নিজস্ব কাজে মন দিতে হবে। সঙ্ঘের একটি সূত্রের দাবি, সঙ্ঘের কার্যকর্তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম, তাই তাঁদের মতামত শুনে কাজ করলে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। এ বারের ভোট তার প্রমাণ। সঙ্ঘের একটি শাখার উত্তরবঙ্গের প্রধানের কথায়, “সঙ্ঘের সঙ্গে বিজেপির সমন্বয় যথাযথ হয়নি। এর ক্ষতি দুই পক্ষকেই স্বীকার করতে হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় চলে আসবে ভেবে নিয়ে সঙ্ঘের অনেক কার্যকর্তা রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছিলেন। তাঁদের সর্তক করা হচ্ছে।” সঙ্ঘের এখনকার বৈঠকগুলিতে বলা হচ্ছে, রাজনীতিতে যেন সদস্যরা না জড়ান। হিন্দু সংস্কৃতি, হিন্দু ঐক্য এবং হিন্দু সংগঠন— সঙ্ঘের এই তিন আদর্শকে মনে রেখে কাজ করাই স্বয়ংসেবকদের একমাত্র লক্ষ্য, মনে করানো হচ্ছে তাঁদের।
বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, “এ নিয়ে আমরা কী বলব। যদি বলার হয় সঙ্ঘই বলবে।”