লুটের সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ।
ডাকাতির আগে রেকি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, একাধিকবার, একাধিক দিন ওই ঋণদানকারী সংস্থার চত্বরে ঘোরাফেরার পরেই শনিবার ডাকাতির ছক করে দুষ্কৃতীরা। শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডে ওই বাণিজ্যিক ভবনে কোথায় কটা দরজা, কোনটায় ক’জন রক্ষী থাকেন, দুপুরে টিফিনের সময় অফিসে ভিড় কেমন থাকে, শনিবার ওই বাড়ির অন্য অফিসগুলি বন্ধ থাকে কিনা, সব নিয়েই ‘রেকি’ করার সময়ে দুষ্কৃতীরা খোঁজ নেয়, মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এ দিন ছিল সপ্তাহের চতুর্থ শনিবার। ফলে বর্ধমান রোডের ওই ভবন এবং আশপাশের চারটি ব্যাঙ্কের শাখাগুলি বন্ধ ছিল। তাতে পুলিশি নজরদারি, লোকের ভিড়, সবই ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম। ভবনটির তিনতলায় আর চত্বরের যে ক’টি অফিস, দোকান খোলা থাকার কথা, শনিবার হওয়ায় দুপুর ২টার মধ্যে সেগুলিও বন্ধ হয়ে যায়। এ দিনই আবার সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা অবধি মেরামতির জন্য গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। তাতে সংস্থার অ্যালার্মও বাজানো যায়নি বলে অভিযোগ। ভবনের সামনেই তৈরি হচ্ছে উড়ালপুল। রাস্তা দু’পাশে টিনের বেড়া দিয়ে উঁচু করে ঢাকা। তাতে ভবনের সামনে সরু গলিতে কে ঢুকছে, কে বার হচ্ছে— তা ঠিকমতো দেখা কঠিন। পুলিশ মনে করছে, এই সব সুযোগই কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
ভবনটির সামনের সরু মাটির রাস্তার একপাশে ঝংকার মোড়, আরেক পাশে একটি শপিং মলের সামনে আসা যায়। সেখান থেকে একদিকে মাটিগাড়ার তুম্বাজোত, বাজার হয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে বালাসন সেতুর কাছে এশিয়ান হাইওয়ে-২ পৌঁছনো যায়। আরেক দিক দিয়ে জলপাইমোড়, নৌকাঘাট হয়ে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে এনজেপি স্টেশন, মেডিক্যাল কলেজ বা জলপাইগুড়ির দিয়ে পালানো সম্ভব।
পুলিশ তদন্তে নেমে দু’টি ফুটেজ পেয়েছে। তাতে বড় দু’টি ব্যাগে সোনা ভরে দুই দুষ্কৃতীকে বাইকে তুম্বাজোতের দিকে পালাতে দেখা গিয়েছে। খানিকটা দূরে আরকেটি সন্দেহজনক গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল বলেই জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, পাঁচ দুষ্কৃতী ছাড়াও তাদের সহযোগী আরও কয়েকজন থাকতে পারে। গাড়ি, বাইকে ভাগ হয়ে তারা পালিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে দাবি, সোনা বোঝাই ব্যাগ নিয়ে সিড়ি দিয়ে ধীরেসুস্থে নেমে দুষ্কৃতীরা পালায়। তাতেই এলাকাবাসীর বিষয়টি বুঝতে পারেননি। ওই ভবনে’র সামনের এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী মোহতার আলি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় আমি এটিএমের ভিতরে ছিলাম। কিছুই টের পাইনি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, দুটি গাড়িই শিলিগুড়ির নম্বর প্লেটের। তবে সেগুলি ভুয়ো কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে।
সন্ধ্যায় ঘটনার পর এলাকায় যান নর্থবেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘পুরোটাই বাণিজ্যিক এলাকা। কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলে। একাধিক ব্যাঙ্ক রয়েছে। তার পরেও সংস্থাগুলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখে না। পুজোর আগে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’’