দ্বন্দ্বে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতি

টাকা থেকেও স্কুলে বন্ধ মিড-ডে মিল

অ্যাকাউন্টে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তবুও সেই টাকা খরচ করতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলের মিড-ডে-মিল, ছাত্রাবাস। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পরিচালন কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে এমনই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মালদহের হবিবপুরের আইহো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৫
Share:

অ্যাকাউন্টে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তবুও সেই টাকা খরচ করতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলের মিড-ডে-মিল, ছাত্রাবাস। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পরিচালন কমিটির দ্বন্দ্বের জেরে এমনই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মালদহের হবিবপুরের আইহো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

Advertisement

বুধবারও বকেয়া টাকার দাবিতে স্কুলের মুল গ্রেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান রান্নার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এ দিনও স্কুলের পঠন পাঠন হয়নি। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। স্কুলের এমন পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষ দায় চাপিয়েছেন পরিচালন কমিটির প্রতিনিধিদের উপরেই। পরিচালন সমিতিও অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করতে ছাড়েনি। তবে এই কাজিয়ার জেরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের প্রশ্ন, স্কুল পড়ুয়াদের সমস্যার সুরাহা হবে কী ভাবে?

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ ডিসেম্বর স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি অমিত দাস অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে হবিবপুর ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল মিশ্র ও ওই স্কুলের শিক্ষক তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের নেতা প্রলয় ঘোষের নাম প্রস্তাব করেন। প্রলয়বাবু স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় প্রধানশিক্ষক তা মানতে চাননি। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা মিশন অভিযানের নিয়ম রয়েছে, পরিচালন কমিটির প্রত্যেক প্রতিনিধিকে স্নাতক হতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্যবাবু উজ্জ্বল মিশ্রের স্নাতক স্তরের শংসা পত্র দেখতে চান। তবে তৃণমূল নেতা উজ্জ্বলবাবু প্রধান শিক্ষকের কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানান। তাই প্রধান শিক্ষকও তাঁকে প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করেন নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অচিন্ত পাঠক বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টা ব্লক প্রশাসনে জানানো হয়েছে। তাঁরা সমস্ত বিষয় দেখছেন।’’

Advertisement

স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি অমিত দাস পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রধান শিক্ষকের উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে মিড-ডে-মিলের টাকায় প্রচুর গরমিল করেছেন প্রধানশিক্ষক। তা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতেই তিনি আমার দেওয়া মনোনীত সদস্যদের মেনে নিচ্ছেন না। আর অভিভাবক প্রতিনিধি উজ্জ্বলবাবু তাঁর স্নাতকের প্রমাণপত্র জমা দেবেন ব্লক প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের উপস্থিতিতেই।’’

কিন্তু সাত মাস পরে কেন প্রমাণপত্র দেবেন তিনি? অমিতবাবুর জবাব, ‘‘আমি অসুস্থ ছিলাম।’’ উজ্জ্বলবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমি হবিবপুরের একটি স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি রয়েছি। স্নাতক না হলে কীভাবে সভাপতি হলাম? দু্র্নীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কায় প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্যবাবু আমাকে অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে মানতে রাজি হচ্ছেন না।’’

এই দ্বন্দ্বের জেরে স্কুলে শিকেয় উঠেছে পরিষেবা। পরিচালন কমিটির সভাপতি স্কুলের কোনও বিলেই স্বাক্ষর করছেন না বলে অভিযোগ। সমস্যায় পড়তে হয়েছে স্কুলের প্রায় দু’হাজার ছাত্রছাত্রীকে। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই স্কুলে বন্ধ রয়েছে মিড-ডে-মিল। সাত মাস ধরেই কয়েক ক্যুইন্টাল চাল মজুত রয়েছে স্কুলে। সেই চাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

মিড-ডে-মিলের রান্নার কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জনা পঞ্চাশ মহিলা। প্রায় ৭০ হাজার টাকা তাঁদের বকেয়া রয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী অদিতি মন্ডল বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের বকেয়া টাকা পাচ্ছি না। তাই এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছি। আগামীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

বন্ধ ২০ জনের থাকার যোগ্য স্কুলের ছাত্রাবাসটিও। অভিভাবকদের আশঙ্কা, এমন চলতে থাকলে স্কুলের বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কারণ অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে সমস্ত পরিষেবাই।

স্কুল কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, হস্টেলের জন্য অ্যাকাউন্ডে রয়েছে প্রায় সাড় তিন লক্ষ টাকা, মিড-ডে-মিলের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। কিন্তু কাজিয়ার জেরে বিলে স্বাক্ষর না হওয়ায় তা খরচ করা যাচ্ছে না। পড়ুয়ারা তাঁদের প্রাপ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হবিবপুর ব্লকের বিডিও ফুরবা দর্জি শেরপা বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানের জন্য আজ, বৃহস্পতিবার দুইপক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছি। আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement