—ফাইল চিত্র
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) শিক্ষা সেল। সম্প্রতি সেই খবর পৌঁছেছে নবান্নেও। সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘গেরুয়া রাজনীতি’র সক্রিয়তা ঠেকাতে শুরু হয়েছে নজরদারি। রাজ্যের শাসক দলের তরফে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঢুকে পড়ছে আরএসএস। শাসক দলের কাছে খবর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলশিক্ষকদের নাগপুরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে আরএসএস।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাছাই করা কিছু স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আরএসএসের শিক্ষা সেল। শনি-রবিবার সেলের বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ ছাড়াও আরএসএসের স্থানীয় দফতরগুলিতে বৈঠক চলছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের নিজেদের এলাকায় অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে সুকৌশলে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের প্রচার চালাতে বলা হচ্ছে। গত সোমবারই নাম না করে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেরুয়া শিবিরের সক্রিয়তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পুলিশ-প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এ ব্যাপারে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের উত্তরবঙ্গের এক কর্তা জানিয়েছেন, গত একমাস ধরে সঙ্ঘের সক্রিয়তা বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমমনোভাবাপন্ন লোকের সংখ্যা বাড়িয়ে সরকারের প্রচার-কাজ চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে, ছাত্র সংগঠনের সক্রিয়তা বাড়িয়ে তাদের ইউনিট খোলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে শাসক-বিরোধী গোলমাল, সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়ছে। বিভিন্ন থানা, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালন সমিতিগুলিও নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবেন।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিবাদ, আর্থিক অনিয়ম, বদলি, পদোন্নতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সামনে রেখে প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে সঙ্ঘ। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশকে তাঁরা পাশে পেয়েছেন বলে তৃণমূলের তরফেই খবর। নিজেদের ছাত্র সংগঠনকে দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়মিত তুলে ধরার কাজ চলছে। এ ব্যাপারে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।
কয়েকদিন আগেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া শিবমন্দির বিএড কলেজে সঙ্ঘের শাখায় ক্লাস নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কলেজের মাঠে ঝান্ডা পুঁতে নিয়মিত সকাল থেকে ঘণ্টাদুয়েক ক্লাস চলে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলের নেতাদের দাবি, ওই শাখা ক্লাস থেকে আলোচনা, শরীরচর্চার পাশাপাশি সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের সমর্থনের প্রচারও চলেছে। তেমনি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা হচ্ছিল।