রায়গঞ্জ পুরভোট

সময়ে ভোট চেয়ে হাইকোর্টে মোহিত

বিধানসভা ভোটে জিতেছেন। পুরভোটের বেলাতেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ মোহিত সেনগুপ্ত। তাই রায়গঞ্জে ঠিক সময় ভোট করাতে এ বার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এই পুরসভায় তৃণমূলের জেতার আশা নেই দেখে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসানোর পথে হাঁটতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০১:৫০
Share:

বিধানসভা ভোটে জিতেছেন। পুরভোটের বেলাতেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ মোহিত সেনগুপ্ত। তাই রায়গঞ্জে ঠিক সময় ভোট করাতে এ বার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এই পুরসভায় তৃণমূলের জেতার আশা নেই দেখে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসানোর পথে হাঁটতে চাইছে।

Advertisement

মোহিতবাবুর এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী ২২ জুলাই কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পুরসভার মেয়াদ শেষের অন্তত এক মাস আগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজ্য সরকার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। রায়গঞ্জের ক্ষেত্রে মেরেকেটে আর তিন সপ্তাহ বাকি। এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি রাজ্য সরকার। তাদের এই চুপচাপ বসে থাকা দেখেই মঙ্গলবার পুরসভার তরফে হাইকোর্টে মামলা করেছেন মোহিতবাবু।

বুধবার সাংবাদিকদের সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আসলে তৃণমূল সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে রায়গঞ্জে নিজেদের ঘর গোছাতে চাইছে। তাই শহরের নাগরিক পরিষেবা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা ঠিক সময়ে নির্বাচন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’

Advertisement

উত্তর দিনাজপুর বাম-কংগ্রেস জোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে নটি আসনের মধ্যে পাঁচটি জয়ী হয় জোট। তৃণমূল চারটিতে। তবে মোহিতবাবুরা ভোটের পরে যতটা দাবি করেছিলেন, ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, ঝুলি ততটা ভরেনি। বরং তৃণমূল একা লড়ে ভাল ফলই করেছে। এই পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরসভা দখলে তারা যে সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে, সেটা মনে করছেন জেলার অনেকেই। কিন্তু বিধানসভা ভোটের হিসেব সামনে রাখলে দেখা যাবে, এই মুহূর্তে সেটা অসম্ভব। রায়গঞ্জের ২৫টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থীর থেকে এগিয়ে ছিলেন মোহিতবাবু। গোটা পুর এলাকায় তিনি ২১ হাজারেরও বেশি ভোটে ‘লিড’ নেন। মাত্র দু’মাসের মধ্যে এই ব্যবধান তৃণমূল মুছে ফেলবে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের তাই সময় চাই। আর সে জন্যই প্রশাসক বসিয়ে তারা ভোট ছ’মাস পিছিয়ে
দিতে পারে।

বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম ঠিক এ দিকেই আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, ভোট ছ’মাস পিছিয়ে দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে তৃণমূলকে ঘর গোছানোর সুযোগ দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।’’

কিন্তু কী ভাবে? বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূল নেতারা একটি বিষয় নিয়ে এখানে সরব। তা হল, রায়গঞ্জ পুরসভায় আসন পুনর্বিন্যাসের নামে তৃণমূলের জেতা আসনগুলি অন্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক মাস আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই কাজটি সারে। তখন তারা আসন সংখ্যাও দু’টি বাড়িয়ে ২৭ করে দেয়। তার পরেই আসন পুনর্বিন্যাসের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানায় তৃণমূল। সেখান থেকে সাড়া না মেলায় হাইকোর্টে মামলা করা হয়। প্রশাসনের দাবি, ওই মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রাজ্য ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবে না। এখন বিজ্ঞপ্তি জারি করলে পরে হাইকোর্ট সেটা বাতিলও করে দিতে পারে।

মোহিতবাবুদের আশঙ্কা, এই ভাবে সময় কিনতে চাইছে প্রশাসন। এর মধ্যে পুরসভার মেয়াদ পেরিয়ে গেলে প্রশাসক বসিয়ে দেবে তারা। মোহিতবাবুর সঙ্গে একমত জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালও। সে কারণেই হাইকোর্টে পাল্টা মামলার সিদ্ধান্ত। জেলাশাসক রণধীর কুমার অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement