ওদের অনেকেই খাওয়ার থালা নিয়ে স্কুলে আসে। কেউ আবার হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে খাওয়ার সময় হলে থালা আনতে ছুটে যায় বাড়িতে। জল খাওয়ার সময়ে গ্লাস নিয়ে কাড়াকাড়িও নিত্যদিনের ঘটনা। গ্লাসের অভাবে অনেক পড়ুয়া আবার নলকূপে মুখ লাগিয়ে জল খেতে বাধ্য হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্কুলে মিডডে মিল প্রকল্প চালু রাখতে সমস্যা বাড়ছে। তেমনি পড়ুয়ারা টিফিনের সময়ে বাড়ি থেকে থালা ও গ্লাস আনতে যাওয়ায় সময় অপচয়ের কারণে পঠনপাঠনও ব্যহত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে উত্তর দিনাজপুর জেলার ন’টি ব্লকের মিডডে মিল প্রকল্পের আওতাভূক্ত সমস্ত পড়ুয়াকে স্টীলের থালা ও গ্লাস দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলার সমস্ত স্কুলে সুষ্ঠুভাবে মিডডে মিল প্রকল্প চালু রাখতে গত জানুয়ারি মাসে ন’টি ব্লকের প্রশাসনিক কর্তাদের সম্মতিতে প্রকল্পের আওতাভুক্ত পড়ুয়াদের স্টীলের থালা ও গ্লাস দেওয়ার প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন।
সেইমতো, সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলিতে কত পড়ুয়াকে মিডডে মিল খাওয়ানো হয়, সেই তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপরেই জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছে থালা ও গ্লাস কেনার জন্য আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজ্য শিক্ষা দফতর পড়ুয়াদের থালা ও গ্লাস কেনার জন্য জেলা প্রশাসনকে ৩ কোটি ৮২ লক্ষ ২২ হাজার ২১০ টাকা বরাদ্দ করেছে।
এই প্রথম পড়ুয়াদের মিডডে মিল খাওয়ার জন্য স্টীলের থালা ও গ্লাস দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি ডান-বাম বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন সহ পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, স্কুলগুলিতে থালা ও গ্লাস বরাদ্দ হলে মিডডে মিল প্রকল্প ও পঠনপাঠন দুটোই সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
জেলা মিডডে মিল প্রকল্প আধিকারিক সজল তামাং বলেন,‘‘আগামী একমাসের মধ্যেই জেলার সমস্ত স্কুলে থালা ও গ্লাস সরবরাহের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’ করণদিঘির ভূষামণি-১ অবৈতনিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দুই পড়ুয়া সুপ্রিয়া বিশ্বাস ও অপু মণ্ডল বলে, ‘‘টিফিনের সময়ে ইস্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে থালা নিয়ে ফের স্কুলে এসে খাবার খেতে হয়। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে গ্লাস আনি না। তাই কলে মুখ লাগিয়েই জল খেতে হয় আমাদের। থালা ও গ্লাস পেলে আমাদের আর কষ্ট করে বাড়ি যেতে হবে না।’’