পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত নিউ চামটা হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুয়ারে সরকারে আদিবাসী মহিলাদের ভিড়: ছবিঃ বিনোদ দাস।
রাস্তার এক পাশে চা বাগান। উল্টো দিকে, প্রাথমিক স্কুলের মাঠে বসেছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। কাজ শেষে দল বেঁধে সেই পথে বাড়ি ফিরছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁরা জানেনই না, স্কুল-মাঠে টেবিল পেতে কারা বসেছেন এবং কী হচ্ছে? কাছে গিয়ে জানতে পারলেন, শিবিরের কথা। শিবিরের কাউন্টারে সরকারি কর্মীর সঙ্গে বসে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের অঞ্জলি বাস্কে।
চা শ্রমিকেরা পঞ্চায়েত সদস্যের সামনেই জানালেন, অনেকের বাড়িতেই তফসিলি উপজাতির শংসাপত্র নেই। জানলে, আবেদন করতে পারতেন। শিলিগুড়ি মহকুমার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিউ চামটা হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের ছবি। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে মাত্র দু’টি আবেদন জমা পড়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, শিবিরে তৃণমূল নেতারা বসে থাকলে, বিরোধী যাঁদের যাওয়ার কথা, তাঁরাও যাচ্ছেন না। ফলে, শিবিরে ভিড় নেই বলে দাবি তাদের।
ওই অভিযোগ মানতে নারাজ পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জলি। তাঁর দাবি, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সকলের জন্য। শিবিরের কথা এলাকায় জানানো হয়েছিল। হঠাৎ শিবিরের ঘোষণা হয়েছে। চা শ্রমিকদের কাজের দিন থাকায় ভিড় কম হয়েছে। অঞ্জলির বক্তব্য, ‘‘সহযোগী শিবির। এক জন মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী বসেছিলেন। তাঁকে সাহায্য করতেই শিবিরে বসে আবেদনকারীদের সাহায্য করেছি। রাজনীতির কোনও বিষয় নেই।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, কোনও জনপ্রতিনিধিরই ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের কাউন্টারে বসার অনুমতি নেই। তার পরেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিবিরের মাঠে কিংবা আশপাশে শাসক দলের নেতাদের দেখা যায়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও জনপ্রতিনিধিরই থাকার কথা নয়। তার পরেও সাধারণ মানুষের সুবিধায় অনেকে শিবিরের পাশেই থাকেন।’’ মাটিগাড়ার বিডিও বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সঠিক নিয়ম জেনে বলতে পারব।’’
নিউ চামটার এই আদিবাসী এলাকায় ৯৪২ জন ভোটার। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশের তফসিলি উপজাতির শংসাপত্র নেই। অনেকেই প্রথম প্রজন্মে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষিত। ফলে, সে শংসাপত্র তৈরির প্রয়োজনীয় কাগজ দিতে নানা সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি। শ্রমিক আশা তিরকে বলেন, ‘‘কাজ না করলে, ভাত নেই। বিভিন্ন অফিসে দৌড়নো সম্ভব নয়। বাড়ির কাছে এ ভাবে শিবির হলেও, না জানায় সুবিধা নিতে পারিনি।’’
শিলিগুড়ি মহকুমার চার ব্লকের বিভিন্ন শিবিরেই চিত্রটা প্রায় একই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিবিরে ভিড় হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী এলাকায় শিবির করে জাতিগত শংসাপত্রের বিষয়ে জোর দিতে বলেছিলেন। তার পরেও শিলিগুড়ির মতো চা-প্রধান এলাকায় এমন কম আবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ দিন মহকুমায় মোট ছ’শোরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে দাবি।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক বিজেপির আনন্দময় বর্মণ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আবেদন করে সুবিধা পাচ্ছেন না। দুয়ারে শিবিরে তৃণমূল নেতাদেরই ভিড় বেশি। কেউ
যাচ্ছেন না।’’