মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
শাসকদলের নেতাদের হুমকি দিয়ে কেএলও প্রধান জীবন সিংহদের বিবৃতি সামনে এসেছে। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতেও কেএলও-র দাবি নিয়ে পোস্টার পড়েছে। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতায় ফেরার আগে জিটিএ-তে ২০১৭ সালের পরের সময়ের বিশেষ অডিট করার জন্য সিএজি-কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়ে গেলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কেএলও বা কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি।
রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অডিটের নির্দেশকে ন্যায্য বলে দাবি করেন। বিকেলে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যপাল কি উত্তরকে ছিন্নভিন্ন করার খেলায় মদত দিতে গিয়েছিলেন? তাঁর আরও দাবি, কয়েক জন ব্যক্তিকে এই সূত্রে আন্দোলনে নামাতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। প্রশাসনের আধিকারিকদের উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে রাজ্যপাল এই সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে জানান।
রাজ্যপালের ঘোষণা
এ দিন সকালে রাজ্যপাল জানান, ২০১৭ সালের পরের সময়ের জন্য সিএজি-কে দিয়ে বিশেষ অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যপালের কি সেই এক্তিয়ার আছে? রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কি সব ভুলে যাচ্ছেন? উনি পরামর্শ দিতে পারেন। নিজে এ ভাবে অডিট করাতে পারেন না।’’ রাজ্যের আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জিটিএ রাজ্যের অধীনে। তাই দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও রাজ্যপাল কিছুই নিজে করতে পারেন না।’’
২০১৭ সালে রাজ্যের নির্দেশে জিটিএ-তে বিশেষ অডিটের কাজ শুরু হওয়ার মুখে পাহাড়ে আগুন জ্বলে। রাজ্য তখন বিমল গুরুংয়ের আমলের অডিটের নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্যপাল কিন্তু গুরুংয়ের আমলকে এড়িয়ে অডিট করতে বলেছেন। কেন? তাঁর যুক্তি, এর আগে নির্বাচিত প্রশাসক ছিল। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু নির্বাচিত বলে গুরুংয়ের আমলে ওঠা অভিযোগকে এড়িয়ে যাওয়া কি যুক্তিযুক্ত? পাহাড় তৃণমূলের দাবি, রাজ্যপাল যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তৃণমূলকে হেয় করতে চান, তা এই নির্দেশ থেকে স্পষ্ট।
এই ‘নির্দেশ’কে স্বাগত জানিয়েও জিটিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনীত থাপার প্রশ্ন, ‘‘২০১৭ সালে গোলমালের সময় রাজ্যপাল কোথায় ছিলেন? তিনি কেন পাহাড়বাসীর খোঁজ নিতে আসেননি? পাহাড়ের আন্দোলনের সময় কেন্দ্র কোথায় ছিল? কে, কার জন্য, কী উদ্দেশ্য নিয়ে এখন সব করছে, তা সবাই জানে।’’
এখন জিটিএ-র সচিব সুরেন্দ্র গুপ্তই জিটিএ-র প্রধান। তিনি এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকেও সব রিপোর্ট নিয়ে দেখা করতে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, তাঁকে ডাকতে গেলে রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের মারফত চিঠি পাঠাতে হবে। প্রশাসন ও রাজভবন সূত্রের দাবি, শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎ না হওয়ায় তিনি যথেষ্টই ক্ষিপ্ত হন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেন, প্রশাসনের আধিকারিকদের কড়া চিঠি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। দার্জিলিং জেলার প্রশাসনিক মহল সূত্রেও জানা গিয়েছে, জেলার কয়েক জন আধিকারিককে ডিওপিডি-তে অভিযোগ জানানোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার অবশ্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। তবে এই ব্যাপারে তাঁরাও সুরেন্দ্রের মতো মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
বঙ্গভঙ্গে উস্কানি?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আরও অভিযোগ করেন, যাঁরা উত্তরবঙ্গকে অস্থির করতে চাইছেন, রাজ্যপাল এই ক’দিনে জেনে বুঝে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল?
বিভিন্ন দলের সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে তিনি বিজেপির সহযোগী সিপিআরএম, গোর্খা লিগ, গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। দলগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা রাজ্যপালের কাছে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের কথা জানিয়ে এসেছেন। তবে বিমল গুরুং বা বিনয় তামাংদের কারও সঙ্গে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ হয়নি। বিজেপির সাংসদ জন বার্লা, যিনি উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলাকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলেছেন, তাঁর সঙ্গে রাজ্যপাল অবশ্য দেখা করেছেন। কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও ‘মানুষের আবেগের সঙ্গে চলার’ কথা বলছেন। তাঁর সঙ্গেও দেখা করেন রাজ্যপাল। তবে তৃণমূলের কোনও নেতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আগে নিজেদের ‘সংবিধান’ ঠিক রেখে তার পরে রাজ্যপালকে নিয়ে মন্তব্য করুক তৃণমূল।’’