দারুণ অগ্নিবাণে রে

জলস্তর নামায় অকেজো কূপ, হাহাকার গ্রামে

সকাল হলেই যেন আঁতকে উঠছেন মানুষ। আবার সূর্যের দহনে ঝলসাতে হবে সারাটা দিন। প্রচণ্ড গরমে ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় দহন-যন্ত্রণা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩৮
Share:

পুকুর শুকিয়ে কাঠ। এক আঁজলা জলের খোঁজে কাদামাটি ঘাঁটা। বালুরঘাটের খড়াল এলাকায় রবিবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

সকাল হলেই যেন আঁতকে উঠছেন মানুষ। আবার সূর্যের দহনে ঝলসাতে হবে সারাটা দিন।

Advertisement

প্রচণ্ড গরমে ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় দহন-যন্ত্রণা। গ্রামের পাতকুয়ো ঘিরে কুঁজো, কলসি হাতে ভিড় জমাতে শুরু করছেন মহিলারা। একটু পরেই হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে জল নেওয়ার জন্য। গরমকালে এটাই রোজকার চিত্র পুরাতন মালদহের এতকাধিক গ্রামে।

বেলা বাড়তে শুরু করলে দেখা যায় অন্য দিনের মতো রাস্তাঘাটে লোকজন নেই। বেশ কিছু শহর, গঞ্জে রবিবার চার মাথার মোড়গুলো পর্যন্ত এক রকম ফাঁকাই ছিল। পথচারীদের যেমন নজরে পড়েনি, তেমনই বাস বা ছোট গাড়িতেও যাত্রী ছিল কম। বৈশাখের ছুটির দিনে সুনসান রাস্তাঘাট দেখে কোথাও মনে হয়ে যেন বন্‌ধের দিন। তার উপরে ভোট মিটে যাওয়ায় রাস্তাঘাট যেন আরও ফাঁকা ছিল।

Advertisement

মালদহ স্টেশনের সামনের ভিড়েও অন্য দিনের তুলনায় এ দিন ছিল অনেকটাই ফাঁকা। রিকশা, টোটোও তেমন দেখা যায়নি এ দিন।

ভাবুক পঞ্চায়েতের বরতলা গ্রামের। রোজ লাইনে দাঁড়িয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় ওই গ্রামের দুগলি চঁড়ে, পার্বতী মুর্মু, তালাময়ী সোরেনদের। গ্রীষ্মকালে রোদের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ছবি ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী মালকুড়া, আঁধার কোঠা, তোলাডাঙি-সহ পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, গাজল ও বামনগোলা ব্লকের বিস্তীর্ণ গ্রামগুলিতে।

প্রতি বছর গরমে জেলার এই ব্লকগুলিতে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিলেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ না করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, অতিরিক্ত গরম পড়লে কুয়োর জল শুকিয়ে যায়। একটি মাত্র কুয়োর উপরে নির্ভরশীল গ্রামের ৮০টি পরিবার। বেলা বাড়লেই ওই কুয়ো থেকে শুধু কাদা জল বের হয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তখন জল পেতে গেলে ৭-৮ কিমি দূরে ব্লক সদরে যেতে হয়। ভাবুক পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপির মায়া সরকার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের পক্ষে গ্রামে গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জলের লাইন বসানো সম্ভব নয়। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বসানো পাতকুয়ো গরমের সময় সংস্কার করে দিই।’’ পরিস্রুত পানীয় জলের বিষয়টি বিভিন্ন মিটিংয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাতে এখনও ৪০ শতাংশ এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের জল পৌঁছয়নি। ২০ শতাংশ এলাকায় জল প্রকল্পের কাজ চলছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে এখনও জেলার বহু গ্রামের বাসিন্দাদের পানীয় জলের জন্য নির্ভর করতে হয় পাতকুয়ো ও নলকূপের উপরেই। এই জেলায় সব থেকে বেশি পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, বামনগোলা ও গাজলে।

প্রতি বছরই ওই ব্লকগুলিতে দেখা যায় পানীয় জলের জন্য বিক্ষোভ, অবরোধ। গ্রীষ্মকালে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় গ্রামের নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। বরতলা গ্রামের বাসিন্দা সুনীল টুডু, বিনয় বেসরা বলেন, ‘‘৮০টি পরিবারের মানুষ একটি মাত্র কুয়ো থেকে জল নেয়। শেষদিকে জল ঘোলা থাকায় খাওয়ার যোগ্য থাকে না।’’ এমনই অবস্থা রয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রাম পূর্ব বরঞা, তোলা গাঙি, লালদিঘি, ধুমা দিঘি, কইকুড়ি-সহ একাধিক গ্রামেও। হবিবপুরের চাচাই চন্ডী, দমদমা, হবিবপুর, খাটিয়াখানা, বামনগোলার চাঁদপুকুর, পাকুয়া, মহেশপুর, গাজলের জালমাছ কুড়ি, রাঙাভিটা, রানিগঞ্জ-সহ প্রভৃতি এলাকাতেও চিত্রটা একই। পুরুষদের সাইকেলে করে জলের জার নিয়ে ছুটতে দেখা যায় ব্লক সদরে। জেলা পরিষদের জন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ মাঞ্চারুল ইসলাম বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের তরফ থেকে গ্রামে পাতকুয়ো ও টিউবওয়েল বসানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘পানীয় জলের বিষয়টি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর-সহ জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।’’ পানীয় জলের সমস্যা কোথায় কোথায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে সন্ধ্যা হওয়ার পরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে অনেক জনপদই। রাস্তার ধারের ছোট ছোট দোকানগুলো খুলেছে। ইংরেজবাজার মহানন্দা সেতু ও বাঁধ রোডে সন্ধ্যার পরে ভিড় দেখা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement