—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এক সময়ে আম উৎপাদনে অফ-ইয়ার, অন-ইয়ার ছিল। অন-ইয়ারে আমের ফলন ভাল হত। কিন্তু অফ-ইয়ারে ফলন হত কম। এখন প্রতিবছরই মালদহে আমের ফলন অন-ইয়ারের মতোই। অভিযোগ, মূলত কৃষকের আমবাগান লিজে নিয়ে যে সমস্ত ব্যবসায়ী চাষ করছেন তাদের বেশিরভাগ অংশ আমের ফলন বাড়াতে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন গ্রোথ হরমোন থেকে শুরু করে নানা রাসায়নিক। তাতে মালদহ জেলার আমের গুণমান কমে গিয়ে ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে দাবি। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে আম বাগানেরও। এই প্রবণতা ঠেকাতে ও সচেতনতায় চাষিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি আলোচনা সভা হল মালদহের মাধবনগরে থাকা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার রিসার্চ-এর কেন্দ্রীয় কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে।
আমের জেলা বলে পরিচিত মালদহ। ফি বছর এই জেলায় একশোরও বেশি প্রজাতির আম উৎপাদন হয়। জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় প্রায় ৩১৫০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়ে থাকে। গড় ফলন প্রায় তিন লক্ষ টন। দফতর সূত্রেই খবর, এক দশক আগেও মালদহ জেলায় এক বছর আমের ফলন ভাল হলে, তার পরের বছর তুলনামূলক ফলন কম হত। কিন্তু এখন প্রতিবছরই গড় ফলন একই রকম থাকে। কেন এমন পরিস্থিতি? এ নিয়ে জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, ‘‘চাষি নন, অথচ কৃষকের জমি নিয়ে একাংশ ব্যবসায়ী এখন মালদহ জেলায় আম চাষে নেমে পড়েছেন। তাদের একাংশ বেশি পরিমাণ মুনাফার লোভে আমের ফলন বাড়াতে প্রতিবছরই আমের মুকুল আসার আগে গাছের চারপাশে 'প্যাকলোবুট্রাজোল' জাতীয় গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করছে। প্রতিবছর এই হরমোন ব্যবহারের ফলে গাছের ফলন বেশি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আম গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ১০-১২ বছর পর ওই আম গাছ থেকে আর সেভাবে ফলন মিলবে না। এই প্রবণতা ঠেকাতে চাষিদের সচেতন হওয়া জরুরি। আমরাও দফতরের তরফে আম চাষিদের সচেতন করছি।’’
একই ভাবে এ দিন আলোচনাসভায় চাষিদের এই পরামর্শ দিয়েছেন মালদহের কেন্দ্রীয় কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী দীপক নায়েক। এ দিন আলোচনা সভায় ছিলেন মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা ও সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী। সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘‘আমের ফলন বাড়াতে মাত্রাতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন ব্যবহারের ফলে এবং নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারে মালদহের আমের গুণমান কমে যাচ্ছে। এ দিন চাষিদের এ সব বিষয় নিয়ে সচেতন করেছি। পাশাপাশি আলোচনাসভায় বিশেষজ্ঞেরাও আমের গুণগত মান বজায় রাখতে কী ব্যবহার করা দরকার, তা চাষিদের বলেছেন।’’