একে নোটের সমস্যা। তার ওপর ভোটের জন্য মেলা পিছিয়ে গিয়েছে। দুইয়ের জাঁতাকলে রীতিমতো বিপাকে কোচবিহার রাসমেলায় পসরা নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা। মেলার মাঠেই কোনও রকমে বাঁশ, টিন, ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। সেখানেই চলছে রান্না। ২৩ নভেম্বর মেলা শুরু হবে। ফলে টানা এক সপ্তাহ কীভাবে সামলাবেন তা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া খুচরো সমস্যা না মিটলে মেলা আদৌ কতটা জমবে সে প্রশ্নও রয়েছে। সব মিলিয়ে এ বার রাসমেলা ঘিরে চিন্তার কালো মেঘ কাটছেনা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ফি বছর রাস পূর্ণিমার দিন একই সঙ্গে উৎসব ও মেলার উদ্বোধন হয়। আশির দশকের পর এ বার ফের নির্বাচনের জন্য মেলা মিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাস উৎসব হয়েছে ১৪ নভেম্বর। মেলা শুরু হচ্ছে ২৩ নভেম্বর। তার আগের দিন উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে। তারপরেও অবশ্য পসরা নিয়ে রাসমেলার মাঠে বাইরের ব্যবসায়ীরা অনেকেই হাজির হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ ডুয়ার্সের হ্যামিলটনগঞ্জ ও দিনহাটার কালীমেলা থেকে দোকানপাট, পসরা ভেঙে কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে ডেরা করেছেন। ওই ব্যবসায়ীদের একজন গৌরাঙ্গ গোস্বামী বলেন, “নোট বাতিল ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য হ্যামিলটনগঞ্জের মেলায় ভাল ব্যবসা হয়নি। ভোটের জন্য কোচবিহারে আবার মেলা দেরিতে শুরু হচ্ছে। কিন্তু পুরনো মেলা চত্বর ছাড়তে হয়েছে বলে এখানে সবকিছু নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। সাতদিন বসে থাকলে কী করে দৈনন্দিন খরচ জোগাড় করা সম্ভব সেটা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছিনা। কারও থেকে ধার নিয়ে চলব সে অবস্থাও নেই। তাছাড়া খুচরো টাকার যা সমস্যা চলছে তাতে কতদিনে সব স্বাভাবিক হবে, মেলা কতটা জমবে সেসব নিয়ে উদ্বেগে আছি।”
মেলার মাঠে চাবি রিংয়ের দোকান নিয়ে হাজির বিহারের বিনোদ শাহ, কলকাতার বেলঘরিয়া থেকে আসা ব্যাগ বিক্রেতা সজল দাস, শিলিগুড়ির হরে সাহার মত অন্য সমস্ত ব্যবসায়ীদের প্রায় এক বক্তব্য। বিনোদবাবু বলেন, “এটিএম কার্ড নেই। খুচরো টাকাও হাতেগোনা। ব্যবসা বন্ধ। তারপর খাব কী!” সজলবাবুর কথায়, “মেলা দেরিতে জেনেও নিরুপায় হয়ে পসরা নিয়ে আসতে হয়েছে। খোলা মাঠে মাল পাহারা দিতে থাকতে হচ্ছে। রাসমেলায় লাভ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।”
কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারা জানিয়েছেন, গড়ে কয়েকবছর ধরে প্রতিবার ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এ বার সেই অঙ্ক কমবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, “নোট সমস্যায় মানুষ মেলার মত বিনোদনের বদলে খাদ্য, চিকিৎসায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাতেই হিমসিম অবস্থা। ফলে ব্যবসা মার খাবে বলে আমাদেরও আশঙ্কা।”
ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, মাঠে আবর্জনা, দুর্গন্ধ রয়েছে। পানীয় জল, শৌচাগারের সমস্যা আছে। কোচবিহারের এসডিও অরুন্ধতী দে বলেন, “পুরসভার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।”