মণ্ডপের পথে। — নিজস্ব চিত্র
নোটবন্দির প্রভাব পড়ল সরস্বতী বন্দনাতেও। কোচবিহারের বহু স্কুলে এ বার আশানুরূপ চাঁদা না ওঠায় পুজোর বাজেট অনেকটাই কমেছে। যার জেরে প্রতিমা থেকে প্যান্ডেল, এমনকি পড়ুয়াদের ভুরিভোজের আয়োজনেও বরাদ্দ কমিয়েছেন আয়োজকদের অনেকেই। আর্থিক সমস্যার প্রভাব পড়বে আশঙ্কায় প্রতিমা তৈরির সংখ্যা কমিয়েছেন মৃৎশিল্পীদের অনেকেই। তারপরেও সোমবার প্রতিমা কেনার তেমন ভিড় না থাকায় চিন্তা বেড়েছে তাদের। রাত পোহালেই বুধবার পুজো। আপাতত পুজোর দিল সকালের দিকে মুখিয়ে তারা।
বাসিন্দারা জানান, কোচবিহারের প্রাথমিক ও হাইস্কুলের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ফি বছর ঘটা করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়। মূলত পড়ুয়াদের পুজোর জন্য দেওয়া চাঁদার টাকাতেই ওই আয়োজন করা হয়। এ বার নোটবন্দি পরিস্থিতির জেরে অভিভাবকেরা অনেকেই সমস্যায় পড়েন। গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ওই সমস্যার আঁচ এখনও রয়েছে। ব্যাঙ্কেও সপ্তাহে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা লাগু রয়েছে। সব মিলিয়েই বহু স্কুলেই চাঁদা আদায় কমেছে। কোচবিহার সদরের দেওয়ানহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত পাল বলেন, “পড়ুয়ারা নিজেরা চাঁদা তুলেই সরস্বতী পুজোর আয়োজন করে। এ বার অন্য বারের তুলনায় চাঁদা কম উঠেছে। ফলে মণ্ডপ সজ্জা না করে ক্লাসঘরে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিমার বাজেটও কমাতে হয়েছে। অন্য বার পড়ুয়াদের খিচুড়ি ভোগ প্রসাদের পাশাপাশি ফ্রায়েড রাইস, মটর পনির, চাটনি খাওয়ান হয়। সেটাও কমাতে হচ্ছে।” তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত সেন বলেন, “আমাদের স্কুলেও পড়ুয়াদের পুজোর চাঁদা কমেছে। ফলে বাজেটও কমাতে হয়েছে।”
নোটবন্দির জেরে উদ্বেগের ছাপ পড়েছে কোচবিহারের মৃৎশিল্পী মহল্লাতেও। তাঁরা অনেকেই সাফ জানিয়েছেন, আগাম মন্দার আশঙ্কা করে প্রতিমার উৎপাদন কমিয়েছেন। তারপরেও বিক্রিবাটা তেমন জমছে না। মৃৎশিল্পী সুজিত পাল বলেন, “গত বার সব মিলিয়ে আড়াইশো প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। এ বার সেটা কমে পৌনে দু’শো করেছি। কিন্তু পুজোর একদিন আগেও অনেক প্রতিমা এখনও অর্ডার হয়নি।” অপর মৃৎশিল্পী পুলক পাল বলেন, “ক্রেতাদের তেমন ভিড় হচ্ছে না। দেখা যাক কী দাঁড়ায়।”
পুজোর মুখে অবশ্য ফল বাজারের পারদ চড়েছে। ভাল আপেল ১৫০টাকা, আঙুর ১২০ টাকা, মৌসম্বী ১২০ টাকা, বেদানা ১৬০ টাকা, কমলা ২০-৪০ টাকায় চারটি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোচবিহারের রেলগেট বাজারের এক ফল ব্যবসায়ী জানান, প্রচুর ফল তুলেছি, জানি না কী হবে।