শোকার্ত: পরিজন ও প্রতিবেশীরা নুরের স্ত্রী মুক্তারী খাতুনকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার। হরিশচন্দ্রপুরে। নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় তেমন কাজ মিলছিল না। তাই করোনা আবহেই স্ত্রী ও ১০ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু হল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিক নুর ইসলামের (২২)। মঙ্গলবার, ওই শ্রমিকের দেহ এলাকায় পৌঁছয়। শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে গোটা গ্রাম কান্নায় ভেঙে পড়ে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদে রাজমিস্ত্রির যোগনদারের কাজ করতেন নুর। সেখানেই গত শনিবার জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। নুর করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ পরিবারের লোকেদের। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিহার থেকে আসা ওই চিকিৎসকের কাছেই নুরের চিকিৎসা করান স্থানীয় শ্রমিকরা। কিন্তু ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই নুর মারা যান। ওই চিকিৎসকের নামে থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।
মৃতের পরিবার ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, নুরই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। বাড়িতে বাবা, মা ও এক দাদা রয়েছেন। দাদা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। গত বছর লকডাউনের আগে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে বিয়ে করেছিলেন নুর। তার পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু সংসারের কথা ভেবে স্ত্রী, শিশুকন্যাকে নিয়ে হায়দরাবাদে যান। সেখানে বালাপুর থানার নিউ বাবানগরে থাকতেন।
স্বামীর মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী মুক্তারী খাতুন। ক্রমাগত কেঁদে চলেছেন। তাঁকে সামলাচ্ছেন পরিজনেরা। বাবা আব্দুল আলিম বলেন, ‘‘করোনার জন্য ছেলেটাকে যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু বলেছিল, এখানে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। কিন্তু তরতাজা ছেলেটা যে এভাবে হারিয়ে যাবে ভাবিনি।’’
দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তোফাজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘‘পরিবারটি অত্যন্ত অভাবী। ওরা যাতে সরাকরি সুবিধে পায় পঞ্চায়েতের তরফে তা অবশ্যই দেখা হবে।’’