উৎসাহ ছিল অনেক আগে থেকেই। বেঙ্গালুরু জিতবে ধরে উৎসবের আবহও তৈরি ছিল। হবে নাই বা কেন? বিরাট, গেল, এবি, ওয়াটসন তারকার ভিড়। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম অর্ধ পর্যন্ত চিত্রনাট্য তাঁদের পক্ষেই ছিল। প্রথমে বিরাট পরে এবি আউট হতেই হতাশা ঝড়ে পড়ে শিলিগুড়িবাসীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে। শহরের বেশিরভাগ মানুষই আইপিএল ফাইনালে যেন বিরাট কোহালিদেরই সমর্থন করছিলেন। কলেজপাড়ার এক যুবকের কথায়, বিরাট কোহালিরা এত ভাল ক্রিকেট খেলছেন যে, তার জন্যই তাঁদের সমর্থন করছেন তাঁরা। উল্টো দিকে, যুবরাজ-ওয়ার্নারদেরও সমর্থক অবশ্য কম ছিল না। শিলিগুড়ি উৎসুক হয়ে দেখেছে মুস্তাফিজুরের বোলিংও।
খেলা শুরুর সময় ছিল রাত আটটা। তবে সন্ধ্যে থেকেই পানশালা, রেস্তোরাঁগুলিতে ছিল ভিড়। সুরার সঙ্গে ক্রিকেট, রবিবারের মৌতাত জমেছিল ভালই। মোড়ে মোড়ে দেখা গিয়েছে টিভির দোকানে ভিড়। তার মধ্যেই বেটিং চলেছে শহর জুড়েই। হাতের মোবাইল বেজেছে অনেকেরই। বেটিংয়ে যাঁদের অনুমান মিলেছে, তাঁদের হাসি চওড়া হয়েছে। যাঁদের মেলেনি, তাঁদের অনেককেই ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে।
ফাইনাল তো বটেই, রমরমিয়ে প্রতিটি ম্যাচেই চলেছে বেটিং চলেছে বলে অভিযোগ। রবিবার দুপুর থেকেই আইপিএলের ফাইনালের আগে শহরের প্রায় সব জায়গাতেই কিশোর-যুবকদের হাতে হাতে ঘুরেছে বুকিদের মোবাইল নম্বর। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, রয়্যাল চ্যালঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপরীতে হায়দরাবাদ সান রাইজার্সের ব্র্যান্ড ভ্যালু কম হলেও, বুকিদের বিচারে অবশ্য তারা খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স জিতলে ১ হাজারে পাওয়া যাচ্ছিল দেড় হাজার টাকা। সান রাইজার্সের হয়ে একই টাকা বাজি ধরলে পাওয়া যাচ্ছিল আরও ৫০ টাকা বেশি। বিরাট কোহলি না ডেভিড ওয়ার্নার কে বেশি রান করবে তার উপরেও ছিল বাজি। টাকা লেগেছে যুবরাজ সিংহ বনাম এবি ডেভিলিয়ার্সের উপরেও। ব্যক্তিগত লগ্নিতে পিছিয়ে ছিলেন ক্রিস গেল, শেন ওয়াটসন বা শিখর ধবন। আরও এক ভাবে বাজি ধরা হচ্ছিল। প্রথমেই একটা অনুমানে বলতে হবে, কে জিতবে। তাতে এক হাজার থেকে উপরে যত খুশি লগ্নি করা যায়। কত ফেরত আসবে তা দরদামে ঠিক হয়। ধরা যাক এক হাজারে মিলবে ১৫০০ টাকা। অনুমান ভুল হলে, এক হাজার টাকা গ্রাহককে দিতে হবে। ঠিক হলে দেড় হাজার টাকা বুকিরা দেবে।
শিলিগুড়ি পুলিশের কয়েকজন অফিসার জানান, স্টেশন ফিডার রোড, খালপাড়া, প্রধাননগর, বিধান মার্কেট, কলেজপাড়া, এলাকায় পুলিশি অভিযানের জেরে পুরনো বুকিদের বদলে দেওয়া হয়েছে। বদলে ফেলা হয়েছে পুরনো ফোন নম্বরও। তবে রবীন্দ্রনগরে নতুন কোনও বুকি ছিল না। গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির রবীন্দ্রনগর এলাকা থেকে তিনজন বুকিকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। তারপর থেক পুরনো জায়গা বদলে দেওয়া হয়েছে।
গত বছর আইপিএল চলাকালীন এক পানশালার ম্যানেজারকে বেটিং চক্র চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কলেজপাড়া থেকেও এক ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় একাধিক ল্যাপটপ, এমনকী আইপিএল নিয়ে বাজি ধরে এক অটোচালককে খুনও হতে হয়েছিল সেবক রোড এলাকায়। চলতি বছরেও রথখোলার এক যুবকের জলে ডুবে মৃত্যুর পরে আইপিএলে লগ্নি করে হারার অভিযোগ ওঠে। তার পরে পুলিশ শহরের চক্রটিকে পুরোপুরি ভাঙতে কেন পারছেন না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্নও রয়েছে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন এলাকায় নজর রাখছি। প্রমাণ পেলেই বেটিং চক্রের জড়িতদের ধরা হয়েছে। তবে আগের যাদের ধরা হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য মেলেনি।’’