দুঃস্থদের সাহায্যে শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
মুখোমুখি বসে পরিকল্পনা হয়নি। দু’জন জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা, একজন কলকাতার বিধাননগরের। ফোনে কথা হয়েছিল। অনলাইনে টাকা জমা হয়েছে। তাতেই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা অক্ষয় তৃতীয়া উদ্যাপন করলেন জলপাইগুড়িতে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দিন কয়েক আগে থেকেই। শহরের মাসকলাইবাড়ি এলাকা ঘুরে ঘুরে ভাঙাচোরা বাড়ির বাসিন্দা, রোগে ভোগা, দুঃস্থ মানুষগুলির হাতে একটা করে চিরকুট দিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে সকল এসে কাগজ দিলেন আর ৩ কেজি চাল, এক কেজি আলু-সহ ডাল, সয়াবিনের প্যাকেট হাতে নিলেন। প্যাকেটে রাখা ছিল সাবান আর মাস্কও।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা শিক্ষক দীপক দাসের কথায়, “আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বানানীদি। উনি কলকাতায় থাকেন। উনি খুব চেয়েছিলেন অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই এগুলি বিলি করি।”
দীপকবাবু জলপাইগুড়ির বাসিন্দা হলেও উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। আরএক শিক্ষক হলেন স্বপন তালুকদার। তিনিও জলপাইগুড়ির বাসিন্দা কিন্তু শিক্ষকতা করেন মালদহের একটি জুনিয়র হাইস্কুল। বনানী মান্না একসময়ে জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন, এখন কলকাতার বিধাননগর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তিনজনেই জলপাইগুড়ির সঙ্গে যুক্ত। করোনা কালে তিনজনেরই মনে পড়েছিল শহরের দুঃস্থদের কথা। দীপকবাবুর কথায়, “আমাদের মনে হয়েছিল, আমরাও তো কিছু করতে পারি।
বেশি না, হাজার দশেকের কাছাকাছি টাকা হয়তো লেগেছে। সকলে মিলে ভাগ করে নিয়েছি।”
আদতেই যাতে দুঃস্থদের কাছে সাহায্য পৌঁছয় সে কারণে দুই শিক্ষক এলাকা ঘুরে দেখেছেন। ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাদেরও সাহায্য নিয়েছেন। যদিও সকলে মিলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে খাদ্য সামগ্রী বিলি হয়নি। যে যার মতো যখন এসেছে চিরকুট দেখিয়ে প্যাকেট নিয়ে গিয়েছে।
কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল। নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বহু সংস্থা। দ্বিতীয় ঢেউতে লকডাউন ঘোষণা না হলেও বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। শিক্ষকদের কথায়, “একজন রিকশাচালকের আয় কমেছে, কেউ হয়ত কাঠের কাজ, রঙের কাজ করেন, তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না। এই মানুষগুলির কথা চিন্তা করেই আমরা সাহায্য করেছি।” সব মিলিয়ে তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিঃশব্দে প্রায় ২৬১ কেজি আনাজ বিলি করলেন জলপাইগুড়ি শহরে।