জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় দফতর। —ফাইল চিত্র।
শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষকের বদলি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।
শুক্রবার রাতে জেলার মোট ১৩১ জন শিক্ষকের বদলি সংক্রান্ত তালিকা বালুরঘাটে ডিপিএসসি অফিসে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আগামী সোমবার, ১৩ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের নতুন স্কুলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শনিবার ও রবিবার পর পর দু’দিন অফিস ছুটি থাকায় ওই তালিকা দেখতে না পেয়ে শাসকবিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লেনদেন এবং স্বজনপোষনের মাধ্যমে শিক্ষক বদলি হয়েছে বলে তারা অভিযোগও করেছে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বালুরঘাটে চেয়ারপার্সনের মেয়ে, তৃণমূল নেতার ভাই, আত্মীয়, ডিপিএসসির আধিকারিক থেকে চালকল এবং রেশন ডিলারের ছেলেমেয়েদের বাড়ির কাছে বদলি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৬২ জন শিক্ষকের বদলিতে লেনদেনের অভিযোগ তুলে কুমারগঞ্জের এক শিক্ষক জেলা প্রশাসন থেকে রাজ্যের শিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠিয়ে তদন্তের আবেদন করেছিলেন। তার কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ।
শাসকদল পরিচালিত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে ১৩১ জনের বদলি নিয়ে তপন ব্লকের তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের একাংশও ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, তপন, গঙ্গারামপুর এলাকার গ্রামের স্কুলগুলি ফাঁকা করে শিক্ষকদের বালুরঘাটে বদলি করে আনা হয়েছে। ফলে এক জন মাত্র শিক্ষককে দিয়ে স্কুল চালানোর সংখ্যা বাড়ছে। পঠনপাঠন লাটে উঠেছে। তপন পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিজয়াশিস ঘটক বলেন, ‘‘এক শিক্ষক স্কুলের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। নতুন শিক্ষক দেওয়ার বদলে এখানকার স্কুল থেকে শিক্ষক তুলে বালুরঘাটে বদলি করা হচ্ছে।’’ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির তৃণমূল নেতা তথা ডিপিএসসির চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু শিক্ষক বদলিতে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে ওই বদলি হয়েছে। এক সার্কেলের (চক্র) মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষক বদলি হয়েছেন।’’ তবে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক অন্য সার্কেল থেকে বদলি হতে পারেন বলে কল্যাণবাবু দাবি করেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের এবিপিটিএর জেলা সম্পাদক অভিমন্যু দে অভিযোগ করেন, ‘‘কাউকে না জানিয়ে স্বজনপোষনের মাধ্যমে শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। সিনিয়ারিটি মানা হয়নি। এমনকী প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের কেউ বদলির সুযোগ পাননি। অগণতান্ত্রিক ভাবে চেয়ারম্যান নিজে তালিকা তৈরি করে রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে বদলি অনুমোদন করিয়ে নিয়ে এসে অন্য কথা বলছেন।’’
সারা বাংলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ শীলের অভিযোগ, ‘‘এ বারে ১৩১ জনের বদলি নিয়েও একই রকম অনিয়ম হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে শিক্ষকদের বদলি করা হল, জানতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও উত্তর পাইনি।’’ শনিবার সারা দিন জেলার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক মাহাদেব শৈবের মোবাইল ফোন সুইচ অফ করা ছিল। তবে এক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই পর পর শিক্ষক বদলি চলছে।
তপন ব্লক পূর্বচক্রের অধীন ৫৬টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে একটি স্কুলে কোনও শিক্ষকই নেই। ড্রাফট শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চলছে। ৮টি স্কুল চলছে এক জন করে শিক্ষক দিয়ে। বাকি স্কুলগুলিতে মাত্র দু’জন শিক্ষক। অথচ এখানকার একটি স্কুলেও শিক্ষক দেওয়া হয়নি। উল্টে ওই চক্র থেকে কয়েক জন শিক্ষককে বালুরঘাটে বদলি করা হয়েছে বলে তৃণমূলের এক শিক্ষক নেতার অভিযোগ।
সংসদ সূত্রের খরব, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলায় ৬২ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়। তার মধ্যে ৪৬ জন শিক্ষককে গ্রামের স্কুলগুলি ফাঁকা করে বালুরঘাটে তুলে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। জেলায় মোট ২৬টি প্রাথমিক স্কুল এক জন শিক্ষক দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। গত বদলিতে স্বজনপোষন ও দুর্নীতির অভিযোগ করে কুমারগঞ্জের এক শিক্ষক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিবকে লিখিত নালিশ জানান। সেই অভিযোগের তদন্ত হওয়ার আগেই নতুন করে ১৩১ জন শিক্ষককে বদলির ঘটনায় জেলাজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।