প্রতীকী ছবি।
কাটমানি পেতে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত আলিপুরদুয়ার পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশের বিরুদ্ধে। খোদ তৃণমূল নেতাদের একাংশই ওই বিদায়ী কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন। যদিও তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাতেও অবশ্য বিতর্ক থামছে না।
গত মঙ্গলবার দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা প্রসঙ্গে নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আলিপুরদুয়ার পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সরব হলেন দলেরই রাজ্য সহ-সভাপতি তথা জেলার প্রবীণ নেতা জহর মজুমদার। তাঁর দাবি, শহরের বাসিন্দাদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে ওই কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, গরিবদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে উপভোক্তা ঘর তৈরির জন্য ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা পান। যার মধ্যে রাজ্য দেয় ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা৷ দেড় লক্ষ টাকা দেয় কেন্দ্র। আবেদন করার পর উপভোক্তাকে ২৫ হাজার টাকা পুরসভায় জমা করতে হয়। তার পর তাঁকে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করতে হয়৷ ঘর তৈরির একটা অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথম পর্যায়ের পঞ্চাশ হাজার টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ঢোকে। তার পর এক একটি পর্যায়ে কাজ শেষ হওয়ার পর আরও তিন কিস্তিতে বাকি ৩ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে আসে।
জহরের অভিযোগ, “এই ঘর উপভোক্তার নিজের বানানোর কথা৷ অথচ, আলিপুরদুয়ার শহরের অনেক জায়গাতেই দলের কাউন্সিলরদের একাংশ কাটমানি নিতে ঠিকাদারদের দিয়ে সেই কাজ করাচ্ছেন৷ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টের পাশবই ও স্বাক্ষর করা চেক আগে থেকেই নিজেদের কাছে জমা রাখছেন৷ ঘর বানানোর জন্য কিস্তির টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়লে, আগেই ওই সই করা চেকের সাহায্যে তা তুলে নিচ্ছেন।” জহরের অভিযোগ, প্রকল্পের টাকা থেকে কাটমানি পেতেই এই কাজ করছেন ওই কাউন্সিলররা৷ ফলে ঘরগুলি একেবারেই নিম্নমানের হচ্ছে৷ সেগুলি পাঁচ বছর টিকবে কিনা সন্দেহ। জহর জানান, অভিযুক্ত কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন বাসিন্দারা৷ মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি বিষয়টি জানাবেন৷
পুরসভার কর্তারা জানান, এই বাড়ি প্রকল্পে উপভোক্তাদের নিজেদেরই ঘর তৈরি করার কথা৷ তবে পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি৷ কেউ কোনও অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে৷”
জহরের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার টাউন ব্লকের সভাপতি দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও ঘটনা আলিপুরদুয়ার শহরে ঘটেনি৷ অভিযোগ তোলার আগে জহরবাবু এগুলি নিয়ে প্রমাণ দিন৷ উনি তো দলের প্রবীণ নেতা৷ এগুলি জানার পর দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা না বলে এ ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলে দলের ভাবমূর্তি কেন নষ্ট করছেন?’’