নরখাদকের আতঙ্কে রয়েছে রাজাভাত চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। চা বাগানে নিত্যদিনের কাজে করতেই দল বেঁধে লাঠি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গত শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ একটি চিতাবাঘ দশ বছরের এক কিশোরকে টেনে নিয়ে যায় ঝোপের মধ্যে। সেখান তাকে খুবলে খায়। ঘটনার পর থেকেই রাজাভাত সহ সংলগ্ন বেশ কয়েকটি চা বাগানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চিতাবাঘটি ধরার জন্য এলাকায় দুটি খাঁচা পেতেছে বনদফতর।
রাজাভাত চা বাগানের ম্যানেজার অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী জানান, এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে চিতাবাঘের উপদ্রব রয়েছে। জানুয়ারি মাসে দু’জন শ্রমিক চিতাবাঘের আক্রমণে জখম হয়েছে। বন দফতর গত এক বছরে তিনটি চিতাবাঘ খাঁচা বন্দি করে নিয়ে গিয়েছে এলাকা থেকে। শনিবার রাজাভাত চা বাগানের ১৪ নম্বর সেকশনে নরখাদকটি যেখানে উমেশ মুণ্ডা বলে কিশোরকে খায়, সেখান থেকে পঞ্চাশ মিটার দূরেই ম্যানেজারের বাংলো। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “প্রায় চার পাঁচ মাস আগে বাংলোর ভিতরে থাকা সারমেয়র কয়েকটি বাচ্চাকে খেয়েছিল চিতাবাঘ। আধ খাওয়া দেহগুলি বাংলোর বাগানে পড়েছিল। রাতের দিকে প্রায়ই চা বাগানের রাস্তায় চিতাবাঘ দেখা যায়। শ্রমিক সহ সকলের মধ্যেই আতঙ্ক রয়েছে। তবে কাজ শুরু আগে চা বাগানে পটকা ফাটিয়ে কাজ শুরু করা হবে।”
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি অপূর্ব সেন জানান, রাজাভাত চা বাগানে ১৪ সেকশনে শনিবার রাতেই একটি খাঁচা পাতা হয়েছে। রবিবার সকালে আরও একটি খাঁচা পাতা হয়েছে। বন দফতরের নিয়মে মেনে মৃত কিশোরের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ওই এলাকায় লোকজন কম যাতায়াত করলে চিতাবাঘটি দ্রুত খাঁচাবন্দি করা সম্ভব হবে।
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দারা হাতে লাঠি তরোয়াল নিয়ে যাতায়াত করছেন। এলাকার বাসিন্দা উদয় শাহ জানান, চিতাবাঘের আতঙ্ক এলাকায় মানুষের মনে চেপে বসেছে। শনিবার সন্ধ্যায় সকলে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়েছেন। চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিত্য দিনের কাজে হাতে অস্ত্র নিয়ে বের হতে হচ্ছে। এলাকার শ্রমিক শুক্রা ওরাঁও, মালতি মুণ্ডা সীমা মুণ্ডারা জানান, সকলকেই সকাল হলে কাজে যেতে হবে। কিন্তু মনে চিতাবাঘের আতঙ্ক। এ দিকে বাড়িতে বাচ্চারা একা থাকবে। সেখানেও যখন তখন ঢুকতে পারে চিতাবাঘ। তাড়াতাড়ি চিতাবাঘটি খাঁচাবন্দি না হলে, কার কপালে কী অপেক্ষা করে আছে, কেউ জানে না।