বাগানের ভবিষ্যৎ কী, জানা নেই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তরাই-এর বন্ধ ত্রিহানা বাগানকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেল। সোমবার সকালে জেলা তৃণমূল (সমতল) সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বাগানে গিয়ে অভিযোগ করেন, সিটুর আন্দলনের জেরেই বাগানটি বন্ধ হয়েছে। রাজ্য সরকার বাগানটি খোলা, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বাগানের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পর্যটনমন্ত্রীর অভিযোগ।
গত সপ্তাহে বিধানসভায় শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, তৃণমূল বন্ধ বাগানে রাজনীতি শুরু করেছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে যোগ না দিলে সরকারি সুযোগ সুবিধা মিলবে না বলেও প্রচার হচ্ছে। স্পিকার এবং শ্রমমন্ত্রী বিষয়টি দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন।
কিন্তু, পর্যটন মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘গত ৩৪ বছর ধরে আন্দোলন করেও সিপিএমের কেউ কেউ ক্ষান্ত হচ্ছে না। শ্রমিকদের নানা উস্কানি দিচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, কেউ বিধানসভায় গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। বন্ধ বাগানে কোনও রাজনীতি হচ্ছে না। সব শ্রমিকেরা তৃণমূলের পাশেই আছে। সবাই ত্রাণ, সরকারি সুযোগ পাবেন।
গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের জেরে ব্যাঙ্ক থেকে ঠিকঠাক টাকা না মেলার কথা বলে ত্রিহানা বাগান ছাড়েন কর্তৃপক্ষ। চা পাতার গাড়ি আটকানোয় তা বাজারে বিক্রি করা যায়নি বলেও মালিকপক্ষের অভিযোগ। দুদিন পরেই বাগানে সভা করতে গিয়েছিলেন অশোকবাবু-সহ বাম নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘শ্রমিক মহল্লায় নানা ভয় দেখিয়ে দলবদল করানো শুরু হয়েছে।’’
ত্রিহানা বাগানে ত্রিহানা, জাবরা এবং মোহনলাল ডিভিশন রয়েছে। স্থানী ও অস্থায়ী মিলিয়ে আড়াই হাজারের মতো শ্রমিক। বাগানে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ছাড়াও সিটু, আইএনটিইউসি-র শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। বাগান বন্ধের পর অবশ্য সিটু ছেড়ে কয়েকজন নেতা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। রাজেন্দ্র খেয়রা, রমেশ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন তো সিটু করেছি। শাসক দলে থাকলে শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়বেন না বলে আমাদের ধারনা।’’
কেন এমন ধারণা! রাজেন্দ্র, রমেশরা অভিযোগ করেন, অতীতে সিটুকে দিনের পর দিন চাঁদা দিয়েও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার আখেরে কোনও উন্নতি হয়নি। তাঁদের যুক্তি, তৃণমূলের জমানায় বাগান বন্ধ হলে নেতা-মন্ত্রীরা দৈনন্দিন সংসার খরচ দিতে সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে বাগানের চৌকিদার তথা সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য বীরবাহাদুর রাই বলেন, ‘‘বাম আমলেও সুবিধার জন্য সংগঠনে যুক্ত ছিলেন অনেকে। এখন তাঁদের অনেকে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।’’ নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এ দিনই বাগানের গেটে মন্ত্রী দলীয় সভা করেন। পরে পাশের বাগানের দফতর থেকে শ্রমিকদের ত্রাণ বিলির সূচনা করেন। আপাতত প্রত্যেক পরিবারকে ৬ কেজি করে চাল এবং একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। আবার কবে ত্রাণ বিলি হবে তা অবশ্য প্রশাসনিক অফিসারেরা জানাতে পারেননি।
অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওঁরা যদি এতটাই আন্তরিক হন, তা হলে পানিঘাটা বাগানও তো খুলতে পারেনি কেন!’’ এই প্রসঙ্গে মন্ত্রীর জবাব, ‘‘ত্রাণ বিলি চলবে। দুটি বাগানই খোলার চেষ্টা হচ্ছে।’’