আতঙ্ক: গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনার পরে ভয়ে কেঁদে ফেলেছে খুদে স্কুল পড়ুয়ারা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
প্রতিদিনই পণ্যবাহী গাড়িতে চাপিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ অভিভাবকেরা বারবার স্কুল বাসের দাবি করলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি৷ এই অবস্থায় বুধবার প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনাতে পড়তেই তাই উত্তেজনা ছড়াল ময়নাগুড়ির কামারহাটে৷
কামারঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ যেতে যেতে আচমকাই গাড়িটি কাত হয়ে যায়৷ গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যায় কয়েকজন পড়ুয়া৷ আশপাশের বাসিন্দারা দ্রুত সেখানে ছুটে গিয়ে পড়ুয়াদের সকলকে উদ্ধার করে৷ তারপর তারাই জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যান৷ দুর্ঘটনার প্রতিবাদে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পণ্যবাহী গাড়িতে থাকা পড়ুয়াদের প্রত্যেকেই রামসাই যাদবপুর চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলে-মেয়ে৷ তাদের অনেকে পানবাড়ি ভবানী হাই স্কুলে ও বাকিরা পানবাড়ি শিশু নিকেতন নামে একটি স্কুলে পড়াশোনা করে৷ বুধবারের দুর্ঘটনায় দশ জন পড়ুয়া জখম হয়৷ যাদের কয়েকজনকে প্রথমে রামসাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পড়ে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও গোটা ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে৷
জখম ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা স্কুল বাসের দাবি জানালেও বাগান কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী গাড়িতে করেই পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠায়৷ কারও কারও এমনও অভিযোগ, বাগানের এক চিকিৎসক ওই গাড়িটি বাগান কর্তৃপক্ষকে ভাড়ায় দিয়েছেন৷ পড়ুয়াদের তলুনায় আয়তনে ছোট হওয়ায় সবাইকে কার্যত গাদাগাদি করেই স্কুলে যেতে হয়৷
এ দিনের দুর্ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী৷ পড়ুয়াদের হাসপাতালে পাঠানোর পর রামসাই-ময়নাগুড়ি রোডে শুরু হয় অবরোধ৷ অবরোধের নেতৃত্ব দেন কিষাণ খেত মজদুর তৃণমূলের স্থানীয় নেতা প্রদীপ রায়৷ তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে ভাবে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পণ্যবাহী গাড়িতে চাপিয়ে গাদাগাদি করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটা অন্যায়৷ আমরা বারবার বাগান কর্তৃপক্ষকে বললেও তারা কর্ণপাত করছেন না৷ যার ফলেই এদিন চলন্ত গাড়ি থেকে কয়েকজন পড়ুয়া ছিটকে পড়ল৷’’
এ দিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ততক্ষণে এলাকায় পৌঁছে যান ছাত্র-ছাত্রীদের আতঙ্কিত বাবা-মায়েরাও৷ অভিভাবক ধুমা রায়, রীতা ওরাওঁরা বলেন, ‘‘আমাদের কথা শুনে বাগান কর্তৃপক্ষ স্কুল বাসের ব্যবস্থা করলে এ দিন এই ঘটনা ঘটত না৷’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন যে চালক গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই৷
যদিও বাগানের ম্যানেজার প্রদীপকুমার ঘোষ পাল্টা দাবি করেন, ‘‘আমরা পণ্যবাহী গাড়িতে করে পড়ুয়াদের কখনও স্কুলে পাঠাই না৷ ম্যাটাডোরেই তাদের পাঠান হতো৷ কিন্তু কিছু দিন ধরে সেই গাড়িটি খারাপ হয়ে থাকাতে শ্রমিকরা নিজেরাই গাড়ি ঠিক করে কয়েক দিন থেকে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন৷ তা ছাড়া, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই আমরা স্কুল বাসের ব্যবস্থা করছি৷’’
ময়নাগুড়ির থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, কামারঘাট এলাকায় খুব বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি৷ দু’চার জন সামান্য জখম হয়েছে৷ তবে কোন গাড়িতে কী ভাবে কচিকাঁচাদের পাঠানো হচ্ছে, তা ভাল করে খতিয়ে দেখা হবে।