কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই ২০১৫ থেকে। দফায় দফায় অস্থায়ী নিয়োগের মাধ্যমে সামলানো হচ্ছে ওই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়দায়িত্ব। পরীক্ষা নিয়ামকের পদেও স্থায়ী ভাবে কেউ নেই দীর্ঘদিন। এখন পরীক্ষা নিয়ামকের কাজ চালাচ্ছেন উপ-রেজিস্ট্রার। এ বার সেখানে শূন্য হয়ে গেল রেজিস্ট্রার-পদটিও।
এত দিন যিনি অস্থায়ী ভাবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৭ মার্চ। তাঁর কার্যকাল আর বাড়েনি। অন্য কাউকে তাঁর জায়গায় বসানোও হয়নি। ফলে ৮ মার্চ থেকে কোনও রেজিস্ট্রারই নেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রূপায়ণে রেজিস্ট্রারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পদ বেবাক ফাঁকা থাকায় শিক্ষা শিবির হতবাক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন-তিনটি শীর্ষ পদে দীর্ঘ কাল ধরে কেন স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর পরিদর্শকেরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দফায় দফায় অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁদের মন্তব্য, এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থায়ী লোক না-থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। এতে নম্বরও কমে গিয়েছিল কলকাতার। কিন্তু তার পরেও যে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিশেষ কোনও হেলদোল নেই, রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য পড়ে থাকাটা তারই প্রমাণ।
২০১৫-র সেপ্টেম্বরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে চলে যান। তার পর থেকে এ-পর্যন্ত ওই পদে স্থায়ী ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। রেজিস্ট্রারের শূন্য পদে ছ’মাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে বসানো হয় হিন্দি বিভাগের শিক্ষিকা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে দু’বার তাঁ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, এ বার কি ওই পদের জন্য নতুন কারও কথা ভাবা হচ্ছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ জানান, আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলে দিয়েছেন, রেজিস্ট্রার-পদে ফের
মেয়াদ বাড়াতে হলে তাঁর আগাম অনুমোদন নিতে হবে। সেই অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সোমাদেবীর মেয়াদ ফের বাড়ানোর জন্য রাজ্যপালের অনুমতি চাওয়া হয়। উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘আচার্যের অনুমোদন এখনও আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি।’’
তা হলে এখন রেজিস্ট্রারের কাজ কে চালাবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, ৮ মার্চ থেকে কাজ চালাচ্ছেন উপ-রেজিস্ট্রার সুজিত বড়ুয়া। যাঁর উপরে পরীক্ষা নিয়ামকের দায়িত্বও ন্যস্ত রয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। রেজিস্ট্রার-পদে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না কেন? উপাচার্য জানান, বাসববাবু রেজিস্ট্রার-পদ ছাড়েননি। ‘লিয়েন’ নিয়ে রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। তাই রেজিস্ট্রারের পদে স্থায়ী ভাবে অন্য কাউকে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আচার্য-রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।