সাগরদিঘির মণিগ্রাম স্টেশনে এ ভাবেই বন্ধ থাকে শৌচাগার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
দেশকে ‘স্বচ্ছ’ করে তুলতে রাস্তায় নেমেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের তামাম তারকা কুল নেমে পড়েছেন ঝাড়ু হাতে। কিন্তু এই স্বচ্ছতার সঠিক সংজ্ঞা আদৌ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে। বিশেষত রেল স্টেশনগুলি যেন মূর্তিমান বিরুদ্ধতা।
প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই রয়েছে শৌচাগার। কিন্তু সেই সব শৌচাগারের ভিতরের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হচ্ছে দরজায় তালা এঁটে। তাই বাইরের পরিবেশে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি।
আজিমগঞ্জ থেকে রামপুরহাট রেলপথের মধ্যে পড়ে মোরগ্রাম রেল স্টেশনটি। আগে এই রেল পথ দিয়ে চলত গুটি কয় প্যাসেনজার ট্রেন। যাত্রীদের যাতায়াতও ছিল আশপাশের স্টেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে শৌচাগারের প্রয়োজন তেমন পড়ত না। কিন্তু এখন অবস্থাটা বদলেছে। ওই রেল পথে চালু হয়েছে হাওড়াগামী কবিগুরু, গণদেবতার মত কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। পাশেই সাগরদিঘি তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের পদস্থ কর্মীরাও ব্যবহার করছেন মোরগ্রাম স্টেশনকে।
তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন শৌচাগার নিয়ে। বিশেষ করে মহিলারা। শৌচাগারে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। খুব জরুরি দরকারে স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন জানালে তিনি চাবির বন্দোবস্ত করে দেন। তারপর কাজ সেরে আবার তালা ঝুলিয়ে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হবে যাত্রীকেই। সম্প্রতি এমনই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন কলকাতার এক বৃদ্ধ দম্পতি। বহরমপুর কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের এক ছাত্রীও প্রতিদিন এ পথেই যাতায়াত করেন। তিনিও বিরক্ত এই ব্যবস্থায়। মোরগ্রামের স্টেশন ম্যানেজার ভি কে সিংহ তালা ঝোলানোর কথা স্বীকার করে বলেন, “গ্রামীণ খোলা স্টেশন এটি। স্টেশন চত্বরে সকলের অবাধ যাতায়াতের ফলে শৌচাগার নোংরা হচ্ছে প্রতি নয়ত। বাধ্য হয়েই আমরা তাল দিয়ে রেখেছি।”
জঙ্গিপুর রোড স্টেশনের সমস্যা অন্য। সেখানে পুরুষ প্রসাধন খোলা থাকলেও সকাল সন্ধ্যে তালাবন্ধ থাকে মহিলাদের প্রতীক্ষালয়। সেই প্রতীক্ষালয়ের মধ্যেই মহিলাদের শৌচাগার। এখানেও স্টেশন কর্তৃপক্ষের সাফাই বহিরাগতরা প্রতীক্ষালয়ে ঢুকে পড়ে নোংরা করেন। অথচ ওই প্রতীক্ষালয়ের একপাশে স্টেশন কর্মীদের ডিউটি রুম, অন্য পাশে টিকিট কাউন্টার, আরপিএফ ব্যারাক। নিমতিতা স্টেশনেও পুরুষ শৌচাগারের তালা বন্ধ। মহিলাদের কোনও শৌচাগারই ওই স্টেশনে নেই।
মালদহের ডিআরএম রাজেশ অরগলের কথা, “অভিযোগ খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”