সঠিক নামটা লেখা হোক, মুর্শিদাবাদবাসী খুশি হবেন
‘আমার শহর’ বিভাগে গত ১২-১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘আস্তাবল মাঠ আজও কিস্তিমাতের ঘোড়া’ ও ‘দুশোর দোরগোড়ায় জাগছে জাগছে নবাবি স্কুল’ শীর্ষক দু’টি প্রতিবেদন থেকে কেবল শহর মুর্শিদাবাদের লোকই নয়, মুর্শিদাবাদ ও প্রতিবেশী নদিয়া মিলে ২টি জেলার অসংখ্য পাঠকপাঠিকা ঐতিহাসিক শহরে গুরুত্বপূর্ণ ২টি ঐতিহ্যের অনেক অজানা ইতিহাস জানতে পেরেছেন। এ জন্য প্রথমেই আনন্দবাজার পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত, এই ঐতিহাসিক শহরটির নাম ‘লালবাগ’ নয়। প্রকৃত নাম ‘মুর্শিদাবাদ’। অথচ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক সময় মুর্শিদাবাদের পরিবর্তে লালবাগ লেখা হয়। এটি তথ্যগত বিকৃতি। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে ‘মুর্শিদাবাদ যা লালবাগ নামেই পরিচিত। আমাদের কথা হল, লালবাগ মুর্শিদাবাদ পুরসভার অন্তর্গত একটি মৌজার নাম মাত্র। ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে লালবাগ মৌজা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মহকুমাশাসকের কার্যালয়। তার পাশেই রয়েছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ মৌজা। সম্ভবত এ কারণে কেবল মহকুমার নাম লালবাগ। পুরসভা, স্টেশন, ডাকঘর, থানা সব প্রতিষ্ঠানই মুর্শিদাবাদ নামাঙ্কিত। বাংলা, বিহার, উড়িশা নিয়ে গঠিত সুবে বাংলার একদা রাজধানী মুর্শিদাবাদের বর্তমান বয়স এখন ৩১২ বছর। ঐতিহাসিক সেই শহরের সঠিক নাম লেখা হোক। এ বার থেকে লেখা হোক ‘আমার শহর মুর্শিদাবাদ’। তাতে মুর্শিদাবাদবাসী খুশি হবে।
দ্বিতীয়ত, নবাব হুমায়ুন জা-র আমলে তৈরি আস্তাবল বিল্ডিং আজ ধ্বংসের মুখে। ওই ‘হেরিটেজ’ ভবনের প্রবেশদ্বারের মাথায় চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতীক আজও জ্বলজ্বল করছে। প্রতীক- সহ ভবনটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা ভীষণ জরুরি। নইলে একদিন পর্যটকরা পুরাতত্ত্বের ওই নিদর্শন দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে। তৃতীয়ত, ১৯৩৭ সালে নবাব বাহাদুর ওয়াসেফ আলি মির্জার ইচ্ছানুসারে ‘বান্ধব সামিতি’র নামে অনুমতি দখল হিসাবে আস্তাবল মাঠ ভূমি দফতরে নথিবদ্ধ হয়। কিন্তু কারও অঙ্গলি হেলনে ১৯৯০ সালের পর ভূমি দফতরের নথি থেকে বান্ধব সমিতির নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। এই শহরের প্রাণের সম্পদ আস্তাবল মাঠ। সেই মাঠ রক্ষণাবেক্ষন করে বান্ধব সমিতি। অথচ সরকারি ২ লক্ষ টাকার বদান্যতা থেকে প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাব বরাবর বঞ্চিত। মাঠের ও খেলাধুলার উন্নতির স্বার্থে নূন্যতম টাকায় বান্ধব সমিতিকে আস্তাবল মাঠ দীর্ঘ মেয়াদি লিজ দেওয়া প্রয়োজন।
স্বপনকুমার ভট্টাচার্য, সম্পাদক ‘সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতি’
সরকারকে কিছু আর্জি
লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা, থানা, স্টেশন, ডাকঘর মুর্শিদাবাদ নামাঙ্কিত। সে শহরের ক্ষেত্রে ‘আমার শহর লালবাগ’ কথাটি প্রযোজ্য নয়। হবে ‘আমার শহর মুর্শিদাবাদ’। ঐতিহাসিক এই শহরে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি বাস করে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে। ‘আমার শহর’-এর সৌজন্যে সেই ঐতিহাসিক শহরের পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারের কাছে কিছু আবেদন পেশ করতে চাই। এই শহরে নসিপুরে রয়েছে নবাবি আমলের জগৎ শেঠ, দেবী সিংহের বাসভবন, রামানুজ সম্প্রদায়ের আখড়া, জাফরাগঞ্জে মিরজাফরের পরিবারের বাসস্থান ও কবরস্থান, শ্রীপাটকুমোর পাড়ায় গোস্বামীদের মন্দির, মতিঝিলে সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ, অসম্পূর্ণ ফৌতি মসজিদ, নাগিনাবাগে বেগম মসজিদ, বসন্ত আলি নির্মিত কদম শরিফ। নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশনের হিন্দু মুসলিম হস্টেলের মতো সংরক্ষণ-সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে বসেছে। দক্ষিণ দরওয়াজা থেকে নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশন পর্যন্ত ভাগীরথী পাড়ের সৌন্দর্যায়ন জরুরি। পর্যটকদের জন্য শৌচালয় ও জলের ব্যবস্থা করাও দরকার। জরুরি টাঙা, টুকটুক, রিকশা, অটো ভাড়ার তালিকা প্রকাশ।
শান্তনু বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদ
স্কুলের সম্পত্তি উদ্ধার হোক
আমার শহর-এ ‘দুশোর দোরগোড়ায় জাগছে নবাবি স্কুল’ শীর্ষক ইতিহাস আশ্রিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় আমি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী হিসাবে গর্ব অনুভব করছি। আমার দুই পুত্র ওই স্কুলের কৃতী ও পুরস্কৃত ছাত্র। ওই স্কুলের বেশ কিছু সম্পত্তি বেহাত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাক্তনী হিসাবে, ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরের নাগরিক হিসাবে আমরা চাই সেই সম্পত্তি উদ্ধার হোক। সমৃদ্ধ হোক ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশন। ৭-৯ ফেব্রুয়ারি ৩ দিন ধরে স্কুলের ১৯০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে জেনে এই জীবনসায়াহ্নেও পুলকিত হচ্ছি। রেল পথ, সড়ক পথ, জল পথ ও আকাশ পথে যোগাযোগের উন্নতি হলে এই শহরেরও আরও উন্নতি হবে। জগৎ শেঠের বাড়ি, ফৌতি মসজিদ, নৌতর বানুর সমাধি ও মসজিদের মতো বিষয়ের উপর আরও লেখালেখি হোক।
তেজোময় বন্দ্যোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদ