ফ্রিজ খুলে জল খেল একজন। তারপর সে জলের বোতলটি এগিয়ে দিল আর একজনের হাতে।
অল্পবয়সী ওই দু’জনের জল খাওয়ার বহর দেখে বেশ ভয়ে ভয়েই বাড়ির কর্ত্রী, ঘূর্ণির স্বপ্না বৈষ্ণব জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘তোমাদের কি খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?’’ সোমবার রাতদুপুরে ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীরা অবশ্য সে কথার কোনও উত্তর দেয়নি। তারা তখন ব্যস্ত ছিল লুঠপাটে।
চোখের সামনে হাতমুখ বেঁধে স্বপ্নাদেবীর স্বামী নিতাইবাবুকে মারধর করেছে দুষ্কৃতীরা। তাঁর শরীর থেকেও একে একে খুলে নিয়েছে গয়না। কিন্তু তারপরেও এ ভাবে দুষ্কৃতীদের খাওয়ার প্রস্তাব কেন? বছর পঞ্চাশের স্বপ্নাদেবী বলছেন, ‘‘ফ্রিজ খুলে যে দু’জন জল খাচ্ছিল ওদের বয়স বড়জোর একুশ-বাইশ হবে। ওদের ও ভাবে জল খেতে দেখে কেন জানি না মায়া হল। মনে হল, হয়তো ওদের খিদে পেয়েছে। সেই কারণে কিছু খাবে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। তবে ওরা সে কথায় কান দেয়নি।’’
কৃষ্ণনগর শহরের এক প্রান্তে ঘূর্ণি চারাবাগানের বাড়িতে থাকেন ওই বৈষ্ণব দম্পতি। নিতাইবাবু স্থানীয় বাজারে প্রতিষ্ঠিত পাইকারি আলু ব্যবসায়ী। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ দিন রাতে চারাবাগানের ওই বাড়িতে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। স্বপ্নাদেবী জানান, দুষ্কৃতীরা বারান্দার গ্রিলের তালা কেটে আগেই ভিতরে ঢুকে পড়েছিল। তিনি শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ঘরের দরজা খুলতেই চার জন ঘরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে দুষ্কৃতীরা স্বপ্নাদেবীকে জানায় যে, তারা খুন করেছে। পুলিশের তাড়া খেয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়েছে।
স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘খুনের কথা শুনে ভয় পেয়ে ওদের বাড়িতেই থাকতে বলি। কিন্তু তারপরেই ওরা স্বমূর্তি ধরে।’’ প্রথমে তারা নিতাইবাবুর হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। স্বপ্নাদেবীর কাছ থেকে গয়না নিয়ে নেয়। আলমারির লকারের ভিতরে রাখা টাকাও তারা লুঠ করে। দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে স্বপ্নাদেবী পড়শিদের ডাকেন। পুলিশও আসে। মঙ্গলবার কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নিতাইবাবু। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশ ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে বৈষ্ণব বাড়ির সামনে সন্দেহজনক ভাবে একজন ঘোরাঘুরি করছিল। তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিতে ডাকাতি করতে আসা যুবকেরা খাওয়ার প্রস্তাবে কান না দিলেও বছর কয়েক আগে নৈহাটির একটি বাড়িতে রীতিমতো রসগোল্লার হাঁড়ি হাতেই ডাকাতি করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাসেও একটি বাড়িতে ডাকাতি করে চলে যাওয়ার সময় বাড়ির এক বৃদ্ধার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এক দুষ্কৃতী বলেছিল, ‘‘পারলে ক্ষমা করে দেবেন মাসিমা।’’