ছয়ঘরির সচেতনতা শিবিরেই শৌচাগারের জন্য টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
শৌচাগার নির্মাণে পিছিয়ে পড়া মুর্শিদাবাদকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার ‘ব্লু টয়লেট’ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। ২০১৭ সালের মধ্যে জেলার প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্যে ‘পাইলট ব্লক’ হিসেবে ভগবানগোলা-১ ব্লক এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। নভেম্বর মাস থেকেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ। সেই মত ‘ব্লু টয়লেট’-এর মডেল-সহ ট্যাবলো মুর্শিদাবাদের ২৬টি ব্লকের প্রতিটি সংসদ এলাকায় ঘুরছে। চলছে মাইকে প্রচারের কাজও।
পাশাপাশি ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ‘মিশন-৮০’ নামে ভাগীরথীর পাড় বরাবর ১৬টি ব্লকের ৬৫টি পঞ্চায়েতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫টি পঞ্চায়েত যোগ করে প্রায় দু’লক্ষ বাড়িতে ওই প্রকল্পের আওতায় শৌচালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার বহরমপুর ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ছয়ঘরি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে এক জনসচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে ব্লক প্রশাসন। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস, বিডিও বর্ণমালা রায় ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। বিডিও বলেন, “বহরমপুর ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় শৌচালয় নির্মাণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ দিনের সচেতনতা শিবিরে হাজির প্রায় আড়াইশো জন উপভোক্তা শৌচালয় নির্মাণের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন।”
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “নির্মল বাংলা অভিযান প্রকল্পের আওতায় ভগবানগোলা-১ ব্লকের ১৮ হাজার বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিন হাজার উপভোক্তা শৌচালয় নির্মাণের জন্য অর্থ জমা করেছেন। সেইসঙ্গে আগামী মার্চের মধ্যে দু’লক্ষ বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ব্লু টয়লেটের ক্ষেত্রে শৌচাগারের প্লাস্টার করা দেওয়ালেও থাকবে নীল-সাদা রঙের পোঁচ। মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের কথা চিন্তা করেই জেলাপ্রশাসনের ওই ‘ভাবনা’।
ব্লু-টয়লেটের নির্মাণ খরচ ১৩ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী সরকার দেবে ১০ হাজার এবং উপভোক্তা দেবেন তিন হাজার টাকা। এর আগেও নির্মল ভারত অভিযানের আওতায় শৌচালয়হীন বাড়িগুলিতে শৌচালয় নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল। সেই সময়ে মূলত জলের অভাবেই তা সাফল্যের মুখ দেখেনি। প্রশাসনের চাপে পড়ে বা অন্য কোনও কারণে শৌচালয় নির্মাণে করেও পরে গুদাম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, এমন চিত্র বিরল নয়।
এই অবস্থায় শৌচালয়ে জলের অভাবে মিটিয়ে অত্যাধুনিক ঝাঁ চকচকে শৌচালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলাপ্রশাসন। টিনের ছাউনির বদলে নতুন শৌচাগারের মাথায় থাকবে কংক্রিটের ঢালাই ছাদ, ঝকঝকে পিভিসি দরজা, শৌচাগারের ছাদের উপরে জলের ট্যাঙ্ক এবং শৌচালয়ের মধ্যে থাকবে ট্যাপকল।
জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ সালে বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণে মুর্শিদাবাদ ছিল সপ্তম স্থানে, সেখানে বিদ্যালয়গুলিতে শৌচালয় নির্মাণে ছিল ষষ্ঠ। ২০১৩-১৪ সালে বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণে একাদশ স্থান পেলেও বিদ্যালয়গুলিতে শৌচালয় নির্মাণে পঞ্চম এবং ২০১৪-১৫ সালে বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণে চতুর্থ এবং বিদ্যালয়গুলিতে শৌচালয় নির্মাণে প্রথম স্থান পেয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “মুর্শিদাবাদ শৌচালয় নির্মাণে এখন সামনের সারির দিকে এগিয়ে চলেছে।”