অর্পিতা দাস।
দিদির সঙ্গে একই ঘরে থাকত সে, দিদি তাকে বলে গিয়েছিল, ‘তোর সঙ্গে কথা আছে। রাতে ফিরে বলব।’
সে কথা আর শোনা হয়নি পিপাসা দাসের। রাতে আর ফেরেনি দিদি। তার পরের দিনও না। রানাঘাটে রেললাইনের ধারে তার দেহ মেলে।
রানাঘাট কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পিপাসা বৃহস্পতিবার বলে, ‘‘সন্ধে সওয়া ৭টা নাগাদ দিদি ফোন করে বলেছিল, তুই বাড়িতেই থাকিস। কথা আছে। বাড়ি ফিরে ফোনে দিদির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি বারবার। পাইনি।’’ বুধবার রাতেই সৎকার হয়ে গিয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা দাসের। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি এক বন্ধুকে দেখতে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। রাতে রানাঘাট স্টেশনের কাছে চাবি ও মিশন রেলগেটের মাঝে তার দেহ মেলে। প্রাথমিক ভাবে রেলপুলিশের ধারণা, এটা দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নয়।
আত্মীয়-পড়শিরাও মনে করছেন, অর্পিতা আত্মহত্যা করার মেয়ে নন। এ দিন ধানতলা থানার হিজুলিতে তাদের পাড়ায় গিয়ে অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে সে কথা। অর্পিতাদের প্রতিবেশী কেকা দাস বলেন, ‘‘পাড়া মাতিয়ে রাখত মেয়েটা। মঙ্গলবার বিকালেও পাড়ার সকলের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করেছে।’’ পাড়ারই তৃষ্ণা দাসের আক্ষেপ, ‘‘এই ধরনের মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। ও চলে যাওয়ায় এলাকায় গোটা পাড়াটাই অন্ধকার হয়ে গেল।”
ছটফটে প্রাণচঞ্চল অর্পিতা স্কুটি নিয়ে এলাকায় ঘুরতেন। নাচের দলেও ছিলেন। পুজো হোক বা বসন্ত উৎসব, তিনি থাকতেন সামনের সারিতে। তাঁদের প্রতিবেশী, রানাঘাট কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুরজির দাসের কথায়, “নাচের দলের সকলকেও দিদি আগলে রাখত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমায় বলল, ‘চল, দোকানে গিয়ে ঘুঘনি আর ডিম সেদ্ধ খেয়ে আসি।’ ওর কথায় কোনও কষ্ট বা ভয়ের আভাস ছিল না। তার খানিক বাদেই ও আত্মহত্যা করতে যাবে?’’ অর্পিতার বাবা অসীম দাসও মনে করেন, ‘‘আত্মহত্যা করার মতো দুর্বল মেয়ে ও নয়।’’ অন্য কোনও রহস্য নেই তো? যদি কেউ ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে থাকে? রেলপুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সূত্র নেই। রানাঘাট জিআরপি-র আইসি সুভাষ রায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনা বলেই তো মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’
পুলিশের কাছে কারও নামে কোনও অভিযোগ করেননি অর্পিতার বাড়ির লোকজন। অসীমবাবু বলেন, ‘‘কার নামে অভিযোগ করব? কেন করব? ওর কোনও শত্রু আছে বলে আমাদের তো অন্তত জানা নেই।’’ ওই সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন অর্পিতা। অসীমবাবু বলেন, ‘‘ওকে আমি ‘বড় মনা’ বলে ডাকতাম। সে দিন ও যখন বেরোচ্ছে, ওই নামেই ডেকেছিলাম। ও সাড়া না দিয়ে চলে যায়। হয়ত আমার কথা শুনতে পায়নি।’’