প্রতীকী চিত্র
উড়ন্ত গতিতে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বিদ্যুৎ খুঁটিতে ধাক্কা মেরে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেন দুই মোটরবাইক আরোহী। বিক্রম হাজরা (২২) এবং গোপাল সরকার (২২)। দুই যুবকই রঘুনাথগঞ্জের ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা। শনিবার গভীর রাতে লালগোলা-জঙ্গিপুর রাজ্য সড়কে ইসলামপুরের কাছে ওই দুর্ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল— সচেতনতা সুদূর, প্রশাসনের পথ নিরাপত্তা নিছক সাপ্তাহিক নিয়ম পালনের চৌহদ্দিতেই থমকে রইল।
সরকারি উদ্যোগে ঘনঘটা করে ওই নিয়ম পালনের দিনে ধুলিয়ানে মঞ্চ বেঁধেছিল পরিবহণ দফতর। জাতীয় সড়কের কোল ঘেঁষে ঝলমলে মঞ্চ থেকে পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসক দেখেন, রাস্তা দিয়ে হুহু করে একের পর এক, ছুটে চলেছে হেলমেটহীন বাইক। বক্তৃতা থামিয়ে দু’জনেই নেমে এসেছিলেন মঞ্চ থেকে, আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ওই রাস্তাতেই তাঁরা আটক করেছিলেন ১৬ জন নিয়ম-ভাঙা মোটরবাইক আরোহীকে।
তার দু’দিন আগে, জাতীয় সড়কে স্কুল ফেরত বাচ্চাদের নিয়ে ফেরা একটি টোটোকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল গাড়ি। দুই পড়ুয়া এখনও কলকাতায় চিকিৎসাধীন। স্কুল-পড়ুয়াদের পিক-আপ ভ্যান হিসেবে যাতে টোটো ব্যবহার করা না হয়, সে জন্য দিন কয়েক ধরেই স্কুলে ঘুরে প্রচার চালাচ্ছিল পুলিশ। ‘‘সে কথায় অভিভাবকেরা যে তেমন কর্ণপাত করেননি, এ ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল’’, বলছেন এক পুলিশ কর্তা।
সেই নিরবিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনার তালিকায়, শনিবার রাতের ঘটনাটি শেষ সংযোজন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন রাতে, দু’টি মোটরবাইকে চার বন্ধু ছুটছুলেন প্রায় হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ইসলামপুর থেকে পাশের গ্রাম জোতকমলে নিজেদের বাড়িতে। পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যথারীতি হেলমেট ছিল না তাদের কারও মাথায়। পাশ দিয়ে হু হুহ করে লরি বেরিয়ে যাচ্ছে, গতিও বাড়ছে তাদের। সদ্য বৃষ্টি হয়ে গেছে, এই সময়ে রাস্তায় কিছু পড়ে রয়েছে ভেবে পাশ কাটাতে গিয়েছিল একটি বাইক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ধাক্কা মারে রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা গুরুতর আহত দুই যুবককে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বিক্রমের মুরগি বেচাকেনার ব্যবসা ছিল। গোপালের আদি বাড়ি ধুলিয়ানে। তবে, কিছু দিন ধরে সে জোতকমলে দাদুর বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় একটি সোনার দোকানে কাজ করতেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কাজ শেষ হলে, প্রায়ই তারা মোটরবাইক নিয়ে দুরন্ত গতিতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ত। ওই দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারই খেসারত দিল তারা।