প্রতীকী ছবি।
নদিয়া জেলায় তাদের সংগঠন নীরবে বাড়ছে দাবি করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। তাদের হিসাব অনুয়ায়ী, বাম আমলের তুলনায় বর্তমানে এই বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি। শুধু শাখার সংখ্যাবৃদ্ধিই নয়, গত শুক্রবার থেকে নদিয়ায় শুরু হওয়া ‘প্রাথমিক বর্গ’ প্রশিক্ষণ শিবিরের কলেবর বৃদ্ধিই বলে দিচ্ছে সেই কথা। এই জেলায় দীর্ঘ দিন ধরেই আরএসএস সক্রিয়। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের শাখা সংগঠনগুলি জেলার প্রায় প্রতিটি প্রান্তে সক্রিয় ভাবে কাজ শুরু করেছে। ফলে ভোটের ময়দানে বিজেপির হয়ে তাদের সক্রিয়তাও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রতি বছরই নদিয়া জেলায় আরএসএস-এর ‘প্রাথমিক বর্গ’ প্রশিক্ষণ হয়। আরএসএস সূত্রের খবর, মাঝে বছর দুই তা হয়নি। গত বছর ২০২১ কৃষ্ণনগরে সামান্য কয়েক জনকে নিয়ে শিবির হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালেই শেষ বার সেই অর্থে বড় আকারে শিবিরের আয়োজন হয়। সে বার ধুবুলিয়া বিদ্যানিকেতনে আয়োজিত এই শিবিরে প্রায় একশো জন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এ বার সংগঠনের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার জন্য নাকাশিপাড়ার সাহাপাড়া হাইস্কুল ও নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার জন্য তাহেরপুর হাইস্কুলে শিবিরের আয়োজন হয়েছে। সেখানে মতাদর্শগত পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, যোগাসন এমনকি ‘নিযুদ্ধ’ বা ক্যারাটেও সেখান হয়। এই প্রশিক্ষণ শিবির থেকেই পরবর্তী বা প্রথম বর্ষের প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য স্বয়ংসেবকদের পাঠ দেওয়া হয়।
স্বয়ংসেবকদের দাবি, বাম আমলের তুলনায় বর্তমানে তাদের সংখ্যা নদিয়ায় প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদিয়া উত্তরে সংখ্যাটা প্রায় চার হাজারের মতো। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে শাখার সংখ্যা। ২০১১ সালের আগে নদিয়া জেলায় যেখানে মাত্র আট-নয়টি শাখা ছিল, সেটা এই ক’বছরে বাড়তে বাড়তে ৭৩টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে শুধু দক্ষিণেই আছে প্রায় ৪০টি।
আরএসএস-এর এক শাখা সংগঠনের নেতার কথায়, “বাম আমলেও আমাদের প্রাথমিক বর্গ প্রশিক্ষণ শিবির হত। তবে সেটা হত খুবই ছোট আকারে। এক দিকে আমরা যেমন শিবির করার মতো জায়গা পেতাম না, লোকও সে ভাবে এগিয়ে আসত না। খুব বেশি হলে ২০-২৫ জন হত। আর প্রশিক্ষণ হত নিজেদের স্কুলেই।” তাঁর দাবি, “তৃণমূল আমলে পরিস্থিতির অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এখন দলে দলে লোকজন এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করছে।” আরএসএস-এর দাবি, এ বার তাহেরপুরের স্কুলে প্রায় ১৫০ জন ও নাকাশিপাড়ার স্কুলে ১৭০ জনের মতো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। শুধু এই বছরেই ‘জয়েন আরএসএস’ ওয়েবসাইটে পাঁচশো জনেরও বেশি প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই নেতার কথায়, “পুরো বিষয়টি নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা হয়। কারণ আমরা চাই না যে আমাদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসুক। তাতে সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র দাবি, “মমতা সরকারের মদতে এই রাজ্যেও আরএসএস-এর শিকড় ক্রমশ গভীরে বিস্তারলাভ করছে। যা শুধু এ রাজ্যের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্যই বিপজ্জনক।” তৃণমূলের নদিয়া জেলার মুখপাত্র বাণীকুমার রায় পাল্টা বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই গোটা দেশ দেখছে। সিপিএমই বরং তাদের লোকজন ও ভোটারদের বিজেপিতে পাঠিয়ে তাদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলিতেই সেটা দেখা গিয়েছে। আর সেই কারণেই আরএসএস এই বাড়বাড়ন্ত।” সঙ্ঘের শাখা সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক অর্পণ বিশ্বাস অবশ্য দাবি করছেন, “আমাদের শক্তিবৃদ্ধির জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেই। সঙ্ঘের জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের টানেই মানুষ দলে দলে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।”
তবে সঙ্ঘ নেতাদেরই একটা অংশ মনে করছেন, আগে লোকে বিজেপি করলেও আরএসএস-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হত না। এখন বিজেপিতে পদ পেতে বা ক্ষমতা ভোগ করতে আরএসএস করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে অনেকে এই ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন।
সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কার্যবাহ রঞ্জিত সরকার অবশ্য বলছেন, “যে যা-ই বলুক, ধারাবাহিক ভাবেই আমাদের সংগঠনের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে।”