তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
অনর্গল রক্ত বমি আর তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ছটফট করছে বোন। নার্সকে বার বার জানানো হলেও কর্ণপাত করেননি কেউই! অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠলে জরুরি বিভাগে ছুটে যান রোগীর দাদা। অভিযোগ, কাকুতি-মিনতি করা সত্ত্বেও রোগীকে দেখতে আসেননি চিকিৎসক। তরুণীর শ্বাস যখন প্রায় উঠে গিয়েছে, দাদা আবার জরুরি বিভাগে ছুটে যান চিকিৎসককে ডাকতে। চিকিৎসক তাঁকে সটান বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে অমন দু’চারটে মরে!’’ জানিয়ে দেন, তিনি যেতে পারবেন না। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তরুণীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। নদিয়ার তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। চিকিৎসক এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে তরুণীর দেহ নিয়ে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান পরিবারের লোকেরা। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম রিতা বিশ্বাস (৩৫)। তিনি নদিয়ার পলাশিপাড়া থানার সাটিখালি গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। রবিবার সকালে রিতার শ্বাসকষ্ট হতে থাকায় তাঁকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি করানো হয় মহিলা ওয়ার্ডে। প্রথমে অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বেলা দেড়টা নাগাদ হঠাৎ অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি রক্ত বমিও শুরু হয় রিতার। অভিযোগ, পরিবারের লোকজন বার বার ওয়ার্ড সিস্টার এবং কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালেও কেউ গুরুত্ব দেননি। কর্নপাত করেননি কেউ। মৃতার দাদা অর্জুন মণ্ডলের বক্তব্য, সেই সময় দায়িত্বে ছিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবীর দাস। তাঁর হাতেপায়ে ধরলেও তিনি বোনকে দেখতে রাজি হননি। পরে অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে উঠলে আবার অর্জুন আবার জরুরি বিভাগে সুবীরের কাছে যান। অর্জুন বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বার গিয়েও ডাক্তারের হাতেপায়ে ধরেছিলাম। বলল, ‘সরকারি হাসপাতালে অমন দু’চারটে মরে! এত তাড়া থাকলে সরকারি হাসপাতালে কেন নিয়ে এসেছেন?’’
পরিবারের আরও অভিযোগ, তারা রিতাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর পর বিকেলে রিতার মৃত্যু হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে নিকটাত্মীয়েরা। দেহ নিয়ে তাঁরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। অর্জুন বলেন, ‘‘হাসপাতালে এত আইসিইউ বেড, এত আধুনিক পরিষেবা! সব কি ডাক্তারদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য?’’
মৃত তরুণীর পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপার পরাশর পোদ্দার। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও রোগীর মৃত্যুই দুঃখজনক। যা যা করণীয়, সব করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ অভিযুক্ত চিকিৎসক সুবীরেরও দাবি, ‘‘রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বাকিটা দুর্ভাগ্য।’’