দোল মানেই লক্ষ্মীলাভের মরসুম। নবদ্বীপবাসীর কাছে যা কি না এখন ধ্রুবসত্য। অনেকের মতে দোল নাকি ছাপিয়ে যাচ্ছে রাসকেও।
নবদ্বীপের দোলের চরিত্র যতই আন্তর্জাতিক হচ্ছে, ততই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে। নবদ্বীপ এবং মায়াপুর মিলিয়ে দু’শোরও বেশি ছোটবড় মঠমন্দিরে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের কমবেশি পনেরো দিন ধরে থাকাখাওয়া এবং পর্যাপ্ত কেনাকাটার সুফল পাচ্ছে টোটোচালক থেকে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসায়ী।
শহরের প্রবীণ মানুষদের মতে নবদ্বীপের দোল ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। একটা সময়ে দোল বলতে ছিল কেবল গঙ্গার পূর্বপাড়ের মায়াপুর। কিন্তু এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। মায়াপুরকে বাদ দিয়ে নবদ্বীপের দোলও একটা স্বতন্ত্র চরিত্র লাভ করেছে। শেষ দশ বছর ধরে নবদ্বীপের দোল সারা পৃথিবীতে ক্রমশ পরিচিতি পাচ্ছে। গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে নবদ্বীপ শহরের দক্ষিন প্রান্তে কেশবজী গৌড়ীয় মঠ, চৈতন্য সারস্বত মঠ, দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠের বিপুল ভক্ত সমাবেশ। কিংবা মণিপুর রাজবাড়ির ভিন্ন ঘরানার দোলের সঙ্গে নবদ্বীপের উত্তর দিকে নরহরি ধামে ষাট ফুট উচ্চতার মহাপ্রভু মূর্তি, চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের উৎসব গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাসের কথায়, “আমাদের ধারনা, যত দিন যাবে, ততই নবদ্বীপের দোলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। যার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন নবদ্বীপের সব শ্রেণীর ব্যবসায়ী।”
নিরঞ্জনবাবু বলেন, “দোলের পনেরো দিন এই শহরে কমবেশি এক লক্ষ বহিরাগত আস্তানা গাড়েন। তার প্রভাব তো স্থানীয় ব্যবসাবানিজ্যের উপর পড়তে বাধ্য।” শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেবদাস দত্ত বলেন, “নোটবন্দী অবস্থা থেকে নবদ্বীপ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দোলের হাত ধরেই।” পর্যটকের সংখ্যাবৃদ্ধিতে ঠাই নাই রব হোটেল থেকে অতিথিশালা সর্বত্র। হোটেল ব্যবসায়ীদের মায়াপুর শাখার সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “প্রচুর লোক এখন জায়গা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তিন গুণ ভাড়া কবুল করেও এক টুকরো জায়গা মিলবে না গঙ্গার দু’পাড়ে।” তাঁর কথায় এ বার দোলে ব্যবসা ভালই হচ্ছে। ব্যবসায়ী সমিতির কর্তাদের মতে এ বারের দোলের মরশুম আগের থেকে দীর্ঘ হয়েছে। যে সব মন্দির আগে কোনও দিন পরিক্রমা করেনি, এ বছর তাঁরাও পথে নেমেছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি।
নবদ্বীপ পুরাত্তত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “দোলে এখানে যত না কৃষ্ণের দোল, তার থেকে অনেক বেশি মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব। সারা বিশ্বের মানুষ দোলে এখানে আসেন মহাপ্রভুকে স্মরণ করার জন্য। ফেরার পথে কিছু স্মারক নিয়ে যেতে চান। নবদ্বীপের অতীত ঐতিহ্যের কাঁসার বাসনপত্র, তাঁতের শাড়ি এবং শাঁখা স্বাভাবিক ভাবেই কিনতে চান। সব চেয়ে বড় কথা ওই বিপুল পরিমাণ ভিড়টা শহরে এক টানা পনেরো দিন থেকে যায়।”
এর উপর আবার এ বারের দোলে নতুন সংযোজন প্রাচীন মায়াপুরের ষাটফুট উচ্চতার মহাপ্রভু মূর্তি।
সব মিলিয়ে নবদ্বীপের দোল ক্রমশ প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীদের। দোলের নবদ্বীপে এখন উৎসবে বসতে লক্ষ্মী।