সাইকেলটা দেওয়ালে হেলান দিয়ে মুচকি হাসলেন তিনি।
বয়স কম, তৃণমূল করেন বলেই লোকে জানে— ‘‘শুনলাম, নাকি ১৯ মে সূর্যগ্রহণ হবে?’’
মিচকে হাসিটা দেখেই কেস ধরে ফেলেছিলেন মাঝবয়সী স্কুলশিক্ষক। এবিটিএ করেন, অতএব জোটপন্থী। ‘‘আমিও শুনলাম। তবে সেই সময় নাকি হিরের আংটির মত একটা বলয় তৈরি হবে। বাংলার মানুষ এখন সেই সূর্যের জ্যোতির অপেক্ষায় আছে।’’
এই সব কথাবার্তা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছিলেন না অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক। রাজ্য নয়, তাঁর বেশি মাথাব্যথা নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর (উত্তর) নিয়ে। এমনিতেই ‘টাফ ফাইট’। দু’পক্ষই দাবি করছে, তাদের জয় নিশ্চিত। যদি অল্প মার্জিনে হয়, মাত্র দু’আড়াই হাজারে হয়, তবুও। সেই হিসেব মেলাতেই অনেকের মাথা খারাপ। প্রবীণ শিক্ষক তাই তিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘আগে নিজেরটা ভাবো তো! পরে রাজ্যের কথা হবে।’’
তৃণমূলে বিদায়ী বিধায়ক, প্রাক্তন পুলিশকর্তা অবনীমোহন জোয়ারদার আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহার মুখোমুখি লড়াই। কিন্তু পর্দার পিছনে আছে বিজেপি, এই কেন্দ্রে গত লোকসভা ভোটে তাদের ৪১ শতাংশ ভোট ছিল।
বছর পঁয়ত্রিশের তৃণমূল সমর্থক মোটরবাইকের সিটে থাপ্পড় কষিয়ে বলে দিলেন, ‘‘আমরা জিতছি কাকা। দেখে নিও। মানুষ উন্নয়ন চায়।’’ পাশেই নিজের স্কুটির উপরে পা তুলে বসে ছিলেন এক ডাক্তারবাবু। দুপুরে চেম্বার বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে কিছুটা আড্ডা দিয়ে যান। সিগারেটে মৌজ করে টান দিয়ে তিনি চলে যান নিজের তত্ত্বে, ‘‘আরএসএসের প্রধান শত্রু কমিউনিস্টরা। তাই তারা চাইছে তৃণমূল জিতুক। এই কেন্দ্রও ব্যতিক্রম নয়।’’ জোটপন্থী যুবক তেড়ে ওঠেন, ‘‘মানুষ পরিবর্তন চাইছে। কৃষ্ণনগর কি তবে সেটার ব্যতিক্রম?’’
এর মধ্যে পাশে বিভাসের দোকান থেকে তিনটে দুধ আর দশটা লিকার চা আসে। পোস্ট অফিসের ভিতরের ঠেকে লোক বাড়ে, উত্তেজনাও। চড়া রোদ। তার ভিতরেই কামিনী গাছের ছায়ায় ঠেক। তর্ক শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন এক ডাক কর্মী। কিছুটা শুনে মুখ বেঁকিয়ে বলে যান, ‘‘এরা দেখছি আজই ঠিক করে দেবে কারা সরকার গড়ছে!’’
তবে শুধু এই ঠেকেই নয়, কৃষ্ণনগর শহরে চায়ের দোকান থেকে সেলুনে কান পাতলেই কানে আসছে নানা তর্ক, যুক্তি, হিসেব। সন্ধ্যের পর তা মাত্রা ছাড়ায়। সদর মোড়ে এমনি এক ঠেকে হলুদ গেঞ্জির এক যুবক প্রায় চিৎকার করে ওঠেন, ‘‘আরে নিজেদের ঘর আগে সামলা! তোদের কাউন্সিলররাই তো বলছে, এ বার শহর থেকে অবনীবাবু দশ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকবেন।’’ ডবল স্ট্যান্ড করা মোটরবাইকের বসে পা নাচাতে-নাচাতে এক ঠিকাদারের পাল্টা, ‘‘তোদের প্রার্থীকে পুরভোটে জিতে আসতে বল আগে। পুরভোটেই তো জিততে পারেনি!’’
জোটপ্রার্থী অসীম সাহার অন্যতম প্রধান সেনাপতি দিব্যেন্দু বসু বলেন, ‘‘অবনীবাবুর দলের লোকেরাই তো আমাদের সঙ্গে আছে। শুধু কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকা থেকেই আমরা ১০-১২ হাজার ভোটে লিড দেব। লিড থাকবে পাঁচটার মধ্যে অন্তত তিনটে পঞ্চায়েতেও। মিলিয়ে নেবেন।’’
অবনীমোহনের অন্যতম প্রধান সেনাপতি রমেন্দ্রনাথ সরকার পাল্টা বলেন, ‘‘দিবাস্বপ্ন দেখছে! পুরসভা এলাকা থেকে আমরা কত ভোটে লিড দেব, সেটা গণনার পরেই বুঝতে পারবেন। সেই সঙ্গে পাঁচটি পঞ্চায়েতে জিতব। মিলিয়ে নেবেন।’’
মেলাবেন, কে যে মেলাবেন!