নাবালিকা বিয়ে রুখতে মালদহ জেলা প্রশাসন পুরোহিতদের উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছিল। পুরোহিতেরা শপথও নিয়েছিলেন, পাত্রী নাবালিকা হলে তাঁরা বিয়ে দেবেন না। এ বার নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় পুরোহিতেরা নিজেরাই এগিয়ে এলেন। নিজেদের মিলন উৎসবে তাঁরা এমন পাত্র-পাত্রীর বিয়ে দেবেন না বলে সম্প্রতি অঙ্গীকার করেছেন।
সাধারণত লুকিয়েই নাবালিকা বা নাবালকের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। সেক্ষেত্রে পুরোহিতের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই আর কেউ না জানুক, পুরোহিতের কানে খবর উঠবেই। এ বার পুরোহিত নিজেই যদি বিয়ে দিতে রাজি না হয়, তা হলে নাবালিকা বিয়ে একরকম বন্ধই করে দেওয়া যাবে বলে আশা করছে প্রশাসন।
নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবা সমিতিতে ওই মিলন উৎসবে প্রায় দু’শো পুরোহিত ওই মিলন উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন নাকাশিপাড়ার ওসি মুকুল মিঞাও। নাকাশিপাড়া পুরোহিত কল্যাণ সমিতির সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা চেষ্টা করেন যাতে নাবালিকাদের বিয়ে না হয়। তবে নানা কারণে গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও নাবালিকাদের বিয়ে হয়।
তাই সংগঠনের সকল সদস্যকে এই বিয়ের আইনি দিকগুলি সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ে দেওয়ার পর যদি কোনও পুরোহিত আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন, তাঁর পাশে সংগঠন থাকবে না।’’
অনুপমবাবু জানান, কোনও নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, এমন খবর নজরে এলে প্রথমে অভিভাবকদের বোঝানো হবে। তাতেও কোনও কাজ না হলে পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হবে। সংগঠনের সম্পাদক অলোকেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিয়ে দেওয়ার আগে যেন ছেলেমেয়ের জন্মের শংসাপত্র দেখা হয়, সেকথাও সবাইকে বলেছি।’’
তবে বেথুয়াডহরির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ তলাপাত্র পৌরোহিত্য করেন। তিনি জানালেন, সিকি শতাব্দী ধরে বিয়ের পৌরহিত্য করছেন, তবে কখনও নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার অনুরোধ পাননি। একই কথা বলেছেন বেথুয়াডহরির অপর পুরোহিত তাপস মুখোপাধ্যায়ও। ওসি মুকুলবাবু পুরোহিতদের বলেছেন, নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই প্রশাসনকে জানাতে।
কিন্তু নাকাশিপাড়া ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর গোড়ার দিকে নাকাশিপাড়া ব্লকে দু’টি নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার খবর এসেছিল প্রশাসনের কাছে। পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা অভিভাবকদের বুঝিয়ে দু’টি বিয়েই রুখে দিয়েছে।