সেই পাইপ। —নিজস্ব চিত্র।
আশঙ্কা মিথ্যে হলে কার না ভাল লাগে!
রবিবার দিনভর টানটান উত্তেজনার শেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গাংনাপুরের নাসেরকুল। গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘যাক বাবা, বোমা-টোমা যে নয় সেটাই রক্ষে!’’ ফাঁড়া কেটেছে বুঝে কেউ আবার হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘তোমাদের বাপু সব কিছুতেই বড্ড বাড়াবাড়ি। পাইপের টুকরো মানেই কি সকেট বোমা?’’
তা হয়তো নয়। কিন্তু নাসেরকুল এ দিন সাতসকাল থেকেই কাঁটা হয়ে ছিল ‘কী হয়, কী হয়’ ভেবে। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার গভীর রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু রায় পড়শি অমিত দাসকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। অভিযোগ, পড়শি যুবকের কাছ থেকে টাকা ও সোনার হার ছিনিয়ে নেয় বাবলু। বাধা দিতে গেলে সে অমিতকে মারধর করে। জখম অমিতকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
পুলিশ ওই রাতেই বাবলুর বাড়িতে হানা দেয়। বাবলুকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার বাড়িতে ‘সকেট বোমা’ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাড়িটি সিল করে দেয়। শনিবার সকাল থেকে বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা দিতে শুরু করে। রবিবার সকাল থেকে বাড়ির সামনে পুলিশ, দমকল অ্যাম্বুল্যান্স, বম্ব স্কোয়াডের সদস্যদের ভিড় দেখে হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে পড়ে খবর— ‘শুনছ কর্তা, বাবলুর বাড়িতে নাকি বিরাট বোমা আছে গো...’
তামাম গ্রাম ভেঙে পড়ে একচিলতে বাড়িটার সামনে। ফিসফাসও ক্রমে বেড়েই চলে। কেউ বলছিলেন, ‘‘হ্যাঁ গো, খাগড়াগড় কেস না তো?’’ কেউ আবার ধরিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘‘ঘরে এক বস্তা বোমা রয়েছে। ফাটলে রক্ষা নেই।’’ কিন্তু না, সে সব কিছুই হয়নি।
বম্ব স্কোয়াডের সদস্যেরা সকেট বোমার মতো দেখতে লোহার পাইপটি সরিয়ে নিয়ে যান বেশ কিছুটা দূরে একটি ফাঁকা মাঠে। সেখান থেকে ফিরে বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা জানিয়ে দেন— ওটা বোমা নয়। লোহার পাইপ। জল্পনায় দাঁড়ি পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘বাবলুটাও ধন্যি ছেলে! বাড়িতে ওসব পাইপ-টাইপ রাখার দরকারটাই বা কী, কে জানে!’’
রানাঘাটের এসডিপি ও ইন্দ্রজিৎ বসু বলছেন, ‘‘ওটা বোমা নয় ঠিকই। তবে ওই ধরনের পাইপ দিয়েই সকেট বোমা তৈরি করা হয়। বাবলু কেন ওই পাইপ বাড়িতে রেখেছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাবলুর খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’