উচ্ছ্বাস ডোমকলে। নিজস্ব চিত্র
ছোট্ট বাঁশের মাচা, সার দিয়ে লম্বাটে বেঞ্চি। হাতে চায়ের ভাঁড় পৌষের ঠান্ডায় জুড়িয়ে আসছে। তা আসুক, চায়ের দোকানের তাকে টিভির পর্দায় তখন একের পর এক আসনে পিছিয়ে পড়ছে বিজেপি, আর দোকানে চাক বাঁধা ভিড়টা সোল্লাসে ফেটে পড়ছে। ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় বিজেপি’র পরাজয়ে সোমবার সকাল থেকে এমনই উৎসব চোখে পড়েছে পড়শি জঙ্গিপুর মহকুমার গ্রামগুলি। এ-ওর গায়ে হেলে পড়ে হাসি আর হুল্লোড়— এ গ্রামের প্রহ্লাদ সাউ ও গ্রামের সাদেক আলির পিঠে চাপড় মেরে বলছেন, ‘‘তা হলে, এ বার নয়া নাগরিক আইনের মজাটা বোঝা গেল!’’ সাদের দু’হাত তুলে হইগই করে উঠছেন, ‘‘বাপ ঠাকুরদার দেশ থেকে তাড়ানোর ঠেলা বোঝ!’’
ঝাড়খণ্ডে বিজেপি’র পরাজয় যেন নয়া আইনের ধাক্কায় জবুথবু জীবনে যেন নতুন করে বাঁচার আশা জুগিয়েছে তাঁদের মধ্যে!’’
ঝাড়খণ্ডের এই নির্বাচনী রায়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে শমসেরগঞ্জে। ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত লাগোয়া দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত দোগাছি ও ভাসাইপাইকরের অন্তত ২২ টি গ্রাম রয়েছে। মোতাহার হোসেন সেখপুরা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বাড়ি সাকারঘাট গ্রামে। গ্রামের মাঝ বরাবর বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানা। ফলে অর্ধেক গ্রাম শমসেরগঞ্জে, বাকিটা এ রাজ্যে।
মোতাহার বলছেন, “সাকারঘাট গ্রামে ভোটের ফলাফলের পর যেন উৎসবের মেজাজ। শুধু সাকারঘাটেই নয়, পড়শি রাজ্য বিজেপি’র হাতছাড়া হওয়ায় যেন নতুন আশার আলো দেখছে ইসলামপুর, অদ্বৈতনগর, নওপাড়া, দেওতলা।’’
অন্তর্দীপা গ্রামের মন্টু সেখ বলছেন, “যোগ্য জবাব দিয়েছে ঝাড়খণ্ড।” ইসলামপুরে নজরুল ইসলামের কথায়, “গত ক’দিন ধরে আতঙ্কে সেঁধিয়ে থাকা গ্রাম যেন প্রাণ পেয়েছে ঝাড়খণ্ডের এই ফলে।” শমসেরগঞ্জ লাগোয়া পাকুড় কেন্দ্রে এ বারে রেকর্ড ভোট জয়ী হয়েছে কংগ্রেসের আলমগীর আলম। গ্রামের রফিকুল ইসলাম কংগ্রেসের সমর্থক নন। তবু বিজেপি’র পরাজয়ে খুব খুশি তিনি। বলছেন, ‘‘কংগ্রেসকে সমর্থন না করলেও বিজেপি’র পরাজয়ে খুশি না হয়ে পারি!’’ নাম না করলেও চায়ের দোকানে সান্ধ্যকালীন ভিড় জমানো মানুষের মুখে চওড়া হাসি বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্যের ফলাফলে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের মানুষগুলোর ফুরফুরে মেজাজ, যা কাল পর্যন্ত ছিল দুঃশ্চিন্তায় ঘেরা। সাহেবনগর গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষক জিসান আলি চাঁদপুরের বাজারে আসা ঝাড়খণ্ডের লোক দেখলেই ছুট্টে গিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এনআরসি বিরোধ যেন, এক মুঠো স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁদের।
খুশিটা ছড়িয়েছে ডোমকলেও। আব্দুর রশিদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘এনআরসি’র নামে বিজেপি মানুষকে এমন বীতশ্রদ্ধ করে রেখেছে যে বিজেপি কোথাও হেরেছে শুনলেই খুশির বাঁধ ভাঙছে।’’ এ দিন সকাল থেকেই গ্রামের মাচা থেকে চায়ের দোকানে টিভির সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রথম থেকেই সবার নজর ছিল প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। সকলেই তাকিয়ে ছিল কি হয় সেটা দেখার জন্য। আর বেলা গড়াতেই কংগ্রেস ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোটের কাছে বিজেপি পিছিয়ে পড়তেই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁরা!