অপুষ্টিতে অসুস্থ শিশুদের জন্য নদিয়া জেলায় চালু হল ‘শিশু সমৃদ্ধি’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ওই শিশুদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসারও ব্যবস্থা করে হবে।
ছ’মাস পরেও যে সব শিশুর অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হবে না, তাদের জেলা সদর হাসপাতালে ‘নিউট্রেশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে’ নিয়ে আসা হবে। সেখানে বাচ্চার সঙ্গে মাকে রেখে চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য পদক্ষেপও করা হবে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “আমরা চাইছি যে জেলায় যেন একটাও অপুষ্টিতে ভোগা শিশু না থাকে। তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে শিশুরা আসে, তাদের সকলেরই প্রতি মাসে ওজন ও উচ্চতা মাপা হয়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য থাকে থাকে কার্ড। সেখানেই প্রতি মাসের হিসেব লেখা থাকে। সেই সঙ্গে থাকে বয়স অনুয়ায়ী শিশুদের স্বাভাবিক ওজন ও উচ্চতার পরিমাপের তালিকা। সেই তালিকা অনুযায়ী যে সব বাচ্চার বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয় বা যাদের ওজন, উচ্চতার দিক দিয়ে স্বাভাবিকের থেকে কম, সেই অনুযায়ী তাদের চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে যে সব শিশুর অবস্থা খুবই খারাপ তাদের ‘রেড জোন’ বা ‘সিভিয়ার জোন’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোটা জেলায় ৫ বছর পর্যন্ত এমন শিশুর সংখ্যা ৫৫০টি। শুক্রবার থেকে শিবির করে সেই সব শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি তার অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় উপদেশও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে কোন শিশু কী কারণে অপুষ্টিতে ভুগছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এ দিন কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের দেপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এমনই একটি শিবিরে উপস্থিত হন জেলাশাসক। সেখানে ‘রেড জোনের’ এগারোটি শিশুকে নিয়ে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। জেলার সর্বত্র ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের তত্ত্বাবধানে এ ভাবে ওই রেড জোনে থাকা শিশুদের অপুষ্টির কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতি দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে সাধারণ নিয়মমাফিক খাবারের পাশাপাশি এই শিশুদের অতিরিক্ত ডিম, ছোলা, গম, সয়াবিনের ছাতু খাওয়ানো হবে। তাদের সকলের হেল্থ কার্ড বানিয়ে প্রতি মাসে বাড়ির কাছের হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে ওই শিশুদের হাসপাতালের নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিডিওদের। আর পরীক্ষা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে তত্ত্বাবধান করবেন ব্লক স্বাস্থ আধিকারিক।
ছ’মাস পরে যে সব শিশুর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হবে না, তাদের প্রয়োজনে জেলা সদর হাসপাতালের ‘নিউট্রেশন রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারে’ নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। শুধু তা-ই নয়, কোনও শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও বিনা খরচে তা করা হবে। অগামী তিন মাসের মধ্যেই ১০ শয্যা বিশিষ্ট ওই সেন্টার চালু করে দেওয়া যাবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের বাণীকুমার রায় বলেন, “দারিদ্রের জন্য যাতে কোনও শিশু পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত না হয়, আমরা সেটাই দেখছি।”