মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হাসপাতাল চত্বর জুড়ে চাপা আতঙ্ক। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
করোনার আতঙ্কে ঘুম কেড়েছে ডোমকলের।
রসুলপুরের জাহানারা বিবি বলছেন, ‘‘যত গন্ডগোল সবই এখন ওখানে। দিন কয়েক আগে আগুন জ্বলল আর এখন করোনা ভাইরাস! মেয়েটাকে বারবার বলছি, ঘরে ফিরে আসতে। রাতে তো ঘুম হচ্ছে না আর!’’ উদ্বেগের পারদ চড়তে ডোমকল থেকে ঘনঘন ফোন উড়ে যাচ্ছে কখনও দিল্লি কখনও বা বেঙ্গালুরু, কেরল। ঘরের মানুষের কাছে নাছোড় প্রশ্ন— ‘হ্যাঁ গো, হাঁচি-কাশি হচ্ছে না তো, ভিড়ের জায়গায় যেও না কিন্তু!’
কিন্তু সে সব মানতে গেলে কী আর ইসরাইল, আশরাফুলদের দিন চলে! ডোমকলের হাজার হাজার বাপ-মায়ের বুকে এখন চেপে বসেছে আতঙ্ক। পরিযায়ী মানুষগুলোর বাড়ির লোক ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা সেই সব মানুষজনকে টানা ফোন করে চলেছেন, ফিরে আসতে বলছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শহর এলাকায় কাজ করা তাঁদের পরিজনেরা করোনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন!
ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা মন্টু মণ্ডল কেরলে এর্নাকুলামে পঞ্চায়েত রোড এলাকায় থাকেন। ফোনে তিনি বলছেন, ‘‘আমরা এখানে তেমন ভাবে কোনও আতঙ্ক বুঝতে পারছি না। শুনেছিলাম কেরলে দু’জন ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু পথে-ঘাটে তার কোন ছাপ নেই। বাড়ির লোকজন অবশ্য উদ্বেগে আছেন, ঘনঘন ফোন করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। ভেবেছি দিন কয়েকের মধ্যেই ঘরে ফিরব তাদের উদ্বেগ কাটাতে।’’
এর আগেও কেরল থেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরে ছিলেন ডোমকলের ডুমুরতলা গ্রামের এক যুবক। সে সময় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গোটা এলাকায়। আর এ বার করোনায় আক্রান্ত না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে নতুন করে। জলঙ্গির বাসিন্দা এন্তাজুল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার তিন ভাই থাকে কেরলে, সেখানে কোনও অসুবিধে নেই বলছে ওরা। কিন্তু মন মানছে না, মনে হচ্ছে ওরা গ্রামে ফিরে এলেই নিরাপদে থাকবে।’’
ডোমকলের এসিএমওএইচ মামুন আল রশিদ বলছেন, ‘‘আতঙ্কের কোনও কারণ নেই, আমরা সব রকম ভাবেই নজর রাখছি এলাকার ওপর। দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে প্রশাসনিক স্তরে, গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নজর রাখতে বলা হয়েছে কড়া ভাবে। ফলে অযথা আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। তবে প্রশাসন আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বললেও সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা মানুষদের উপরে তেমন কোনও নজরদারি চলছে বলে মনে হচ্ছে না তাদের। ডোমকলের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেছেন, ‘‘বিশেষ করে ভিন রাজ্য থেকে রাজ্যে ফেরার সময়ে কোথাও কোনও নজরদারি আছে বলে মনে হচ্ছে না। বিমানবন্দর ছাড়া আর কোথাও করোনা নিয়ে সচেতনতা আছে বলেও মনে হচ্ছে না আমাদের।’’