ছাদের সংসারে মিঠুন। নিজস্ব চিত্র
ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে বাইক হাঁকিয়ে কেউ ছুটেছেন বাজারে, কেউ আবার সপরিবার সটান রওনা দিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি। কেউ চায়ের দোকানে তাস পিটছেন। তবে অনেকে হোম কোয়রান্টিন মেনেছেন, মানছেন। আবার বারবার বলেও বোঝানো যায়নি অনেককে। কিন্তু ডোমকলের শাহাদিয়াড় গ্রামের মিঠুন মণ্ডলের পরিবার হেঁটেছে একেবারে অন্য পথে। ছেলের ঘরে ফেরার খবর পেয়ে বাড়ির ছাদে বানিয়ে ফেলেছে পাটকাঠি দিয়ে আস্তো একটি ঘর (হোম কোয়রেন্টিন সেন্টার)। সেখানে দেওয়া হয়েছে বালিশ কাঁথা থেকে জলের কলসি। একেবারে আলাদা করে থাকা খাওয়া ছাড়াও শৌচাগারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে আলাদা করে। যা দেখে বেজায় খুশি জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
তাঁদের কথায় লেখাপড়া না জানা মিঠুন ও তাঁর পরিবার তাঁদেরও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
দিন কয়েক আগে এলাকার প্রায় ৮০০ শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন কেরল থেকে। তাদের সঙ্গে ছিলেন মিঠুনও। তার পর থেকেই ছাদে। মিঠুনের মা নাজিরা বিবি বলছেন, ‘‘কী করব বলুন, দিদিমণিরা পইপই করে বলে গিয়েছিলেন। সবার ভালর জন্যই এই ব্যবস্থা করেছি আমরা।’’
তিন বেলা খাবার থেকে সকাল-সন্ধ্যায় চা ছাদের উপরে রেখে আসেন মেয়ে মোনালিসা খাতুন। মাঝে মাঝে মা নাজিরা বিবি উঁকি মেরে দেখে আসছেন ছেলেকে। দূর থেকেই কথা বলছে মিঠুন। ওই এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী নাসমিনারা খাতুন বলছেন, ‘‘এক জন অশিক্ষিত শ্রমিক ও তাঁর পরিবার যে ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন, তা আদর্শ ব্যবস্থা।’’ মিঠুন বলছেন, ‘‘আমি চাই না, আমার জন্য কেউ অসুবিধায় পড়ুন। আমার পরিবারের দায়িত্ব আমি এড়াতে পারি না।’’