—ফাইল চিত্র।
ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শনিবার।সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে রবিবার সেই কথাটিই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে মুকুল রায় দাবি করলেন, তাঁর বিজেপি ছাড়ার প্রশ্নই নেই। সেখানে তিনি ১০০% সন্তুষ্ট। যথেষ্ট সম্মানও পাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দিল্লির বাড়ির দরজা থেকে সরে যাওয়া মোদী-শাহের হোর্ডিং আবার স্বস্থানে ফিরে আসবে বলেও জানিয়েছেন মুকুল। একই সঙ্গে তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ‘অপপ্রচার’ কোন মহল থেকে কেন ছড়ানো হল, তা নিয়েও তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।
দিল্লি থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও বক্তব্য, ‘‘মুকুলদা তো ঠিকই বলেছেন। তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার করে কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চায়।’’
তা হলে কি আগামী শুক্রবার মুকুলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বৈঠকের সম্ভাবনা পাকা হতে চলেছে? মুকুলের মন্তব্য, ‘‘দলের অভ্যন্তরে কে কাকে ফোন করছেন বা কী বলছেন, তা আমি সাংবাদিকদের বলব না! তবে আমার চোখের চিকিৎসা সোমবার থেকে শুরু হবে। তার পরে শরীর-স্বাস্থ্য কেমন থাকবে, এখন কী করে বলব?’’ একই প্রশ্নে দিলীপবাবুর অসমাপ্ত মন্তব্য, ‘‘আমি রাজ্য নেতা…।’’ দলের অভ্যন্তরীণ ফোনের কথা বাইরে বলতে না চাইলেও মুকুল অবশ্য এ দিন জানিয়ে দেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার তরফ থেকে তাঁর কাছে কোনও ফোন আসেনি।
সব মিলিয়ে মুকুল-ধোঁয়াশা এ দিনও পুরোপুরি কাটল কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে রাজনৈতিক মহলে। মুকুল অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি বিজেপিতে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ এর পিছনে তাঁর উপরে সিবিআই তদন্তের চাপ কোনও ভাবে কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্নও নস্যাৎ করে মুকুল বলেন, ‘‘সারদা-কাণ্ডে আমার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কোনও মামলা নেই। নারদ-কাণ্ডে একটি মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। ইডি আমার সম্পত্তির হিসেব চেয়েছিল। তাদের কাছে সব দাখিল করেছি।’’
পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে গত বুধবার থেকে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছে বিজেপি। বুধবার সেই বৈঠকে মুকুল থাকলেও বৃহস্পতিবার দিল্লিতে থেকেও বৈঠক এড়ান তিনি। চোখের জরুরি চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে শুক্রবার তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। দলীয় সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের সম্ভাবনা সংক্রান্ত একটি হিসেব নিয়ে বুধবারের বৈঠকে এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে মতান্তর হয় মুকুলের। তার পরেই তিনি পরের বৈঠক এড়িয়ে কলকাতায় ফেরেন। এই প্রেক্ষিতেই মুকুলের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের ‘দূরত্ব’ এবং তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন জল্পনা ইন্ধন পায়। মুকুলের দিল্লির বাড়ির দেওয়াল থেকে মোদী-শাহের ছবি-যুক্ত হোর্ডিং খুলে যাওয়া নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।
মুকুল অবশ্য গোড়া থেকেই দলের কোনও নেতার সঙ্গে তাঁর মতান্তরের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি এ দিনও বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দলের কোনও নেতার সংঘাত বা মতান্তর নেই। আর নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের ছবির হোর্ডিং খুলে দিয়েছে দিল্লির পুর-নিগম। আমি আমার দিল্লির অফিসকে ওই হোর্ডিং আবার লাগাতে বলেছি।’’ মুকুলের আরও দাবি, তাঁকে দু’-এক দিন হাতে নিয়ে গত বুধবার দিল্লিতে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। বৈঠক যে পাঁচ দিন চলবে, তা তাঁর আগে জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার থেকে দিল্লির বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে যে সাংগঠনিক খতিয়ান নেওয়া হচ্ছে, তাতে তাঁর থাকা জরুরি নয়। এর পরে দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাক পড়লে তিনি যাবেন বলেও মুকুল জানান।
তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কি তাঁর কোনও আলোচনা হয়েছে? মুকুলের জবাব, ‘‘না হয়নি।’’ তাঁকে নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার’ চলছে বলে দাবি করে মুকুল বলেন, ‘‘আমি চাই, কারা এটা করছে, তার তদন্ত হোক এবং দোষীরা শাস্তি পাক।’’
কেন্দ্রে মুকুলের মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে জল্পনা থাকলেও এখনও তিনি তা পাননি। সে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘আমি সংগঠন ভালবাসি। সেই কাজেই ভাল আছি। বিজেপিতে আমি সম্মান পেয়েছি। সর্ববৃহৎ দলের জাতীয় কর্মসমিতির ১০০ জনের এক জন আমি। শাহ প্রকাশ্য সভায় আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর কী চাইব?’’
দিল্লিতে এ দিন বিজেপির বৈঠকে রানাঘাট, বনগাঁ, বসিরহাট ও বারাসত লোকসভার অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। দিলীপবাবু পরে বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আমাদের একটু দুর্বলতা আছে। সেখানে নতুন কৌশল নেওয়া হবে।’’