নয়ের জায়গায় তিন!
শিশু ও মা’কে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যে ন’টি ‘মাতৃ-শিশু হাব’ (এমসিএইচ) ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরোদস্তুর কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার মুখে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিল, প্রতিশ্রুতি পালন করা যাচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে টেনেটুনে তিনটি চালু করা গেলেও বাকি ছ’টি কবে হবে, তা কেউ জানে না!
যে তিনটি এমসিএইচ চালু হয়েছে, সেই উলুবেড়িয়া, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদেও ‘থোর বড়ি খাড়া’-র গল্প। পরিকাঠামো যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে, শুধু মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির মান রাখতে হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও শিশু বিভাগের পুরনো শয্যাগুলোকেই নতুন বাড়িতে তুলে আনা হয়েছে। কোনও নতুন শয্যাও তাতে যোগ হয়নি বা নতুন যন্ত্রপাতি আসেনি। আলাদা কোনও চিকিৎসক বা কর্মীও নিয়োগ হয়নি। এক প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, এই তিনটিরও অনেক কাজ বাকি। উলুবেড়িয়ায় ঝকঝকে বাড়ি ছাড়া কোনও পরিকাঠামো নেই। নদিয়ায় তো স্ত্রীরোগ বিভাগ এখনও পুরনো ভবনেই রয়ে গিয়েছে। নতুন ভবনে উঠে এসেছে শুধু শিশুবিভাগ। ফলে সমন্বয় করে কাজ করা যাচ্ছে না। কোনও যন্ত্রও কেনা হয়নি। মুর্শিদাবাদে স্ত্রীরোগ-শিশুবিভাগ এক ভবনে উঠে আসা ছাড়া পরিকাঠামোয় কোনও উন্নতি হয়নি।
তাঁর কথায়, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এক ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা করে দিয়েছেন ফলে পরিকাঠামো ছাড়াই সব চালু হল। এখনও বেশিরভাগ জায়গায় ইন্ডোর চালু হল না। আউটডোরের অবস্থাও তথৈবচ। এই ভাবে সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কি?’’
রাজ্যে গর্ভবতী ও সদ্যপ্রসূতি এবং সদ্যোজাত থেকে ১২ বছর পর্যন্ত
শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে বছর
দু’য়েক আগে মাতৃ-শিশু হাবের কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক হয় ন’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমসিএইচ তৈরি হবে। প্রতিটিতে ২৫০টি করে শয্যা থাকবে। ন’টি হাবের জন্য চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, টেকনিশিয়ান মিলিয়ে ১৬৬০ জনকে নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে চিকিৎসক ২২৬ জন।
কিন্তু বাস্তবে বাঁকুড়া, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাব চালু করতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সবচেয়ে বড় সমস্যা ডাক্তার নিয়োগ করা নিয়ে। এ ছাড়াও সমস্যা রয়েছে। যেমন, কোচবিহারে ভবনের চারতলার কাজ শেষ হয়নি। বালি-সুড়কি সরবরাহ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যন্ত্রপাতিও আসেনি। বাঁকুড়ায় ভবনের একতলা ও দোতলায় বিদ্যুৎ আনা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, ভবনও সম্পূর্ণ হয়নি। অনেক জায়গায় জমি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হাবটি চালুর জন্য তিন-তিন বার তারিখ ঘোষণা করেও পিছনো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দেরির প্রধান কারণ— চিকিৎসকের বা জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারের অভাব। ৪০ হাজার টাকা বেতনে চিকিৎসকেরা জেলায় গিয়ে মা ও শিশুদের চিকিৎসার মতো গুরুদায়িত্ব নিতে রাজি নন। কারণ, এর থেকে দ্বিগুণ তাঁরা শহরের নামী বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন বসলেই রোজগার করবেন। এমসিএইচ হাবের জন্য চিকিৎসকের অনুমোদিত ২২৬ পদে তাই নিয়োগ শুরুই হয়নি। রাজ্যে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের নজরদারিতে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ডাক্তারদের কেস-প্রতি ইনসেনটিভ দেওয়া নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আসলে বেতন-কাঠামো তো আমাদের হাতে নেই। তবু চেষ্টা করছি। আশা করছি মার্চ মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’