এখনও তিনিই বিধায়ক। তাই খড়্গপুরে কংগ্রেস কার্যালয়ে নিয়মিত সই-সাবুদে ব্যস্ত থাকছেন জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
পার্টি অফিস ফাঁকা বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন কর্মী সেখানে বসে। আর ঘরের এককোণে চেয়ারে বসে আছেন নব্বই পেরনো তরুণটি। পরনে সাদা জামা-প্যান্ট, মাথায় পাগড়ি, আর মুখে চেনা হাসি।
ভোট মিটেছে। তবু ছুটি নেননি রেলশহরের চাচা, খড়্গপুর সদর কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের জ্ঞান সিংহ সোহনপাল। তিনি তো আর শুধু প্রার্থী নন, বিদায়ী বিধায়কও বটে। তাই ৯২ বছরের চাচা সেই বিধায়কের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন মন দিয়ে। সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ে আসা লোকজন কোনও কাগজ ধরালে কংগ্রেস কর্মী লক্ষ্মীনারায়ণ কুণ্ডু তা চাচাকে ধরাচ্ছেন। তিনিও খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে অবিরাম সই করে চলেছেন। লোকজনের সঙ্গে কথাও বলছেন। এক কংগ্রেস কর্মীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘নির্বাচনের আগে-পরে কখনও চাচার মধ্যে টেনশন দেখিনি। কাজের মধ্যেই ডুবে রয়েছেন।’’
খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে ভোট মিটেছে ১১ এপ্রিল। অথচ ভোটের সময়ও রুটিন পাল্টায়নি চাচার। সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গোলবাজার দলীয় কার্যালয়ে এসেছেন। তারপর কাজ সেরে দুপুর একটায় বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম। বিকেল পাঁচটা বাজলে ফের দলীয় কার্যালয়ে। ফিরতে ফিরতে রাত। এখনও সেই রুটিনই চলছে। গত ৩ মে বিধানসভায় এক বৈঠকেও হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রবীণতম বিধায়ক। খড়্গপুরের কংগ্রেস কর্মী অরুময় সরকার বলন, ‘‘রোজ পার্টি অফিসে এসে দেখি চাচাকে অভিভাবকের মতো রয়েছেন। আমরা অনেকসময় তাড়াতাড়ি চলে গেলেও চাচা কিন্তু থাকেন।’’
এখন তো আর প্রচারের ব্যস্ততা নেই। একটু বিশ্রাম নিলেই তো পারেন! চাচার জবাব, ‘‘বাড়িতে বসে কী করব! এখানে আমার অনেক কাজ। তা ছাড়া, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। তাই চলে আসি।’’ পাশেই ছিলেন দলের শহর সভাপতি অমল দাস। তিনি বলেন, ‘‘চাচা সামনে থাকলে দলের কাজ নিয়ে ভাবতে হয় না। আর ১৯ মে পর্যন্ত তো চাচা বিধায়ক। ফলে, শংসাপত্রের কাজ তো করছেনই।’’
ভোট-যুদ্ধে বহু পুরনো সৈনিক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। হার-জিত তাঁর অভিজ্ঞতায় দুই-ই রয়েছে। ১৯৬২ সালে প্রথম খড়্গপুর থেকে জিতেছিলেন চাচা। ১৯৬৭ সালে হারলেও ফের ১৯৭১-এ জয়ী হন। ১৯৭৭ সালে আবার বাম প্রার্থীর কাছে হার। তবে ১৯৮২ থেকে বিধানসভায় চাচার বিজয়-রথ আর থামেনি। তবে এ বার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। চাচার জয়ের রেকর্ড ভাঙতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপি-তৃণমূল। ভোট শেষে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীকে অবশ্য শহরে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের কাজ নিয়েই ব্যস্ত বলে জানা গিয়েছে। আর তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি বলেন, “এখন তো দলের কাজ নেই। তাই নিজের সংসার ও ব্যবসা সামলাচ্ছি। কোনও টেনশন নেই।’’
টেনশন নেই চাচারও। নবতিপর মানুষটি বলছেন, ‘‘এই বয়সে জয়-পরাজয় নিয়ে আর কিছু ভাবি না। যতদিন বিধায়ক রয়েছি মানুষের কাজ করে যাব।’’ ভোটের ফল নিয়ে কাটাছেঁড়াতেও নেই তিনি। কংগ্রেসের খড়্গপুর শহর সভাপতি অমল দাসের কথায়, ‘‘আমরা যদিও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করি, চাচা ও সবে নেই।’’