ঘোলঘোড়িয়া গ্রামে শ্যালো পাম্পই ভরসা

এক কলসি জল ভরতে লম্বা লাইন

নলকূপ অকেজো। পানীয় জলের জন্য ভরসা একটিই মাত্র শ্যালো পাম্প। তাই পাম্প থেকে জল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ লাইনে। এক কলসি জল পেতেও কালঘাম ছোটে। খড়্গপুর-১ ব্লকের ঘোলঘোরিয়া গ্রামের ছবিটা এমনই।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০০:৩২
Share:

দুর্ভোগ: পানীয় জল আনতে কলসি-বালতি নিয়ে পাড়ি। খড়্গপুর গ্রামীণের ঘোলঘোড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র।

নলকূপ অকেজো। পানীয় জলের জন্য ভরসা একটিই মাত্র শ্যালো পাম্প। তাই পাম্প থেকে জল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ লাইনে। এক কলসি জল পেতেও কালঘাম ছোটে। খড়্গপুর-১ ব্লকের ঘোলঘোরিয়া গ্রামের ছবিটা এমনই।

Advertisement

সকালে ঘুম থেকে উঠেই জলের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের বাসিন্দা ঊষা মান্না। বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে শ্যালো পাম্প থেকে বয়ে আনতে হয় পানীয় জল। গ্রামে একটি মাত্র শ্যালো থেকে দিনে দু’বেলা জল মেলে। কিন্তু সেখানে ভিড়ের ঠ্যালায় এক কলসি জল পাওয়াও কঠিন। এই কলসি জল দিয়েই সারাদিন চালাতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্রামের নলকূপ বিকল। গ্রামের অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে বসানো অন্য একটি নলকূপও খারাপ। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেই নলকূপ বিগড়েছে বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ। তাই জলের জন্য শ্যালো পাম্প ছাড়া গতি নেই। ঊষাদেবীর কথায়, ‘‘আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আধ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এ ভাবে জল টেনে আনা সম্ভব।’’

বড় ঘোলঘোরিয়ার বাসিন্দা বীণা চৌধুরী, ছোট ঘোলঘোরিয়ার বাসিন্দা স্বর্ণ দোলুইরা বলছিলেন, “গরমে জলকষ্ট আরও বাড়বে। কুয়োর জলস্তরও এত নেমে গিয়েছে যে চোখে দেখা যাচ্ছে না। বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার না গেলে জল পাওয়া যাচ্ছে না। বাম আমল থেকে জলের দাবি জানিয়ে আসছি। সকলে সমস্যার কথা জানলেও এখনও কিছুই হয়নি।”

Advertisement

পাশের গ্রাম অযোধ্যাগড়ে পাইপ লাইন বাহিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকলেও শ্যালো পাম্প রয়েছে চারটি। এ ছাড়াও রয়েছে আরও কয়েকটি নলকূপ। তাহলে ঘোলঘোড়িয়া কেন বঞ্চিত? রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য একে অপরের দিকে দায় ঠেলতেই ব্যস্ত।

তৃণমূলের দাবি, স্থানীয় সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য এলাকার পানীয় জলের সমস্যার মেটাতে উদ্যোগী হননি। অযোধ্যাগড়ের বাসিন্দা যুব তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি মিঠুন ভুঁইয়ার অভিযোগ, “শুধু ঘোলঘোরিয়া নয়, অযোধ্যাগড়ও বঞ্চিত। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য এখনও সিপিএমের হওয়ায় কোনও কাজ করেন না। আশপাশের গ্রামগুলিতে সজলধারা প্রকল্পে নলবাহিত জলের বন্দোবস্ত হলেও এখানে হয়নি।”

একই সুরে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের অনিল প্রামাণিকেরও দাবি, “পঞ্চায়েতে ঘোলঘোরিয়ার জলসঙ্কট সমস্যা দূর করতে এলাকার সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য কোনও প্রস্তাবই জমা দেননি। টাকা দেওয়া হলে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তা অন্য খাতে খরচ করেন। তাই এই অবস্থা।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের বাণী টুডুর দাবি, “ঘোলঘোরিয়ায় জলের ব্যবস্থা করতে তিনি একাধিকবার পঞ্চায়েতের বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছেন। তৃণমূল জমানায় অন্য পঞ্চায়েত টাকা পেলেও তিনি পাননি।” খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শক্তি মণ্ডল বলছেন, “এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন সিপিএমের দখলে ছিল। সম্প্রতি সিপিএমের অনেকে দলে যোগ দেওয়ায় আমাদের পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। এখন অনেক কাজ হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ঘোলঘোরিয়ায় জলের সমস্যা রয়েছে ঠিকই। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকায় ওই এলাকায় নলবাহিত জলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement