অনুদান বন্ধ ইউজিসির, ছাত্রীর বৃত্তি অনিশ্চিত

 খোঁজখবর করতেই জানা গেল আসল কারণ। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজকে সমস্ত রকম অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০১:৪২
Share:

চিন্তিত: সৌম্যশ্রী রায়।

বরাদ্দ টাকার খরচের হিসেব দিতে না পারায় কলেজকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তাই ‘পোস্ট গ্রাজুয়েট ইন্দিরা গাঁধী স্কলারশিপ ফর সিঙ্গল গার্ল চাইল্ড’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েও টাকা পাচ্ছেন না ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ছাত্রী সৌম্যশ্রী রায়।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের বাংলা এমএ দ্বিতীয় বষের্র ছাত্রী সৌম্যশ্রীর বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্দিরা গাঁধী স্কলারশিপ ফর সিঙ্গল গার্ল চাইল্ড-এর জন্য ইউজিসিতে আবেদন করেন সৌম্যশ্রী। এই স্কলারশিপ পাওয়ার প্রধান শর্ত হল, আবেদনকারীকে বাবা মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তান হতে হবে। এছাড়াও স্কলারশিপের আবেদনকারীকে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘রেগুলার’ হিসেবে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়তে হবে। এবং স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম বর্ষে ৫৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সব শর্ত পূরণ হওয়ায় সৌম্যশ্রী স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হন। ইউজিসি-র তরফে গত বছর সৌম্যশ্রীকে ই-মেল করে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি দু’বছর স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য (২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-২০১৮) বিবেচিত হয়েছেন।

সৌম্যশ্রীকে প্রয়োজনীয় কিছু নথিপত্র নয়াদিল্লিতে ইউজিসি দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে মেল করে পাঠাতে বলা হয়। সে সব পাঠানোর পরে চলতি বছর ২০ এপ্রিল ইউজিসি-র পক্ষ থেকে মেল পান সৌম্যশ্রী। তাতে বলা হয়, যে প্রতিষ্ঠানে তিনি পড়ছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের লগ-ইন আইডি থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠনের প্রমাণের নথিপত্র পাঠাতে হবে। গত দেড় মাস কলেজের প্রশাসনিক বিভাগে ঘুরেছেন সৌম্যশ্রী। কিন্তু সৌম্যশ্রীকে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, স্কলারশিপ সংক্রান্ত কলেজের কোনও লগ-ইন আইডি নেই। আইডি না থাকলে আইডি তৈরি করা যায়। কিন্তু রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ আইডি তৈরি করতে পারছেন না। সৌম্যশ্রীকে কলকাতায় ইউজিসি দফতরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন কলেজ কর্তপক্ষ। মহা সমস্যায় পড়েছেন সৌম্যশ্রী। অবিলম্বে কলেজ থেকে নথিপত্র ইউজিসি দফতরে মেল মারফত না পৌঁছলে স্কলারশিপের টাকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে সৌম্যশ্রীর। তিনি বলেন, “কলেজে করণিকদের টেবিলে টেবিলে ঘুরেছি। কিন্তু সদুত্তর পাইনি।”

Advertisement

খোঁজখবর করতেই জানা গেল আসল কারণ। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজকে সমস্ত রকম অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। কলেজ সূত্রের খবর, আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আমলে ইউজিসি-র দেওয়া বরাদ্দ টাকা খরচের হিসেব যথাযথ দাখিল করতে না পারার কারণে ইউজিসি অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্কলারশিপ সংক্রান্ত আইডি তৈরি করতে পারছে না। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবনারায়ণ রায় বলেন, “ওই ছাত্রীটি আমার কাছেও এসেছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কলেজের অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। সেই কারণে লগ-ইন আইডি তৈরি করা যাচ্ছে না। ইউজিসি দফতরে যোগাযোগ করা হবে।”

নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নথি দাখিল করতে না পারলে স্কলারশিপ পাবেন না সৌম্যশ্রী। দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে সময়। সৌম্যশ্রীর বাবা পেশায় ঝাড়গ্রাম ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের এজেন্ট অতনু রায় বলেন, “স্কলারশিপের টাকাটা পেলে মেয়ের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সাশ্রয় হতো। কিন্তু তা আর হল কোথায়!” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক অভিজিৎ রায়চৌধুরীর আশ্বাস, ‘‘মেয়েটি যাতে স্কলারশিপ পায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement